তহারত কি ? কিভাবে গোসল করবে,পানির মাসয়ালা।

তহারত কি ? কিভাবে গোসল করবে,পানির মাসয়ালা।

তহারত কি ? তহারত আরবী শব্দ যার অর্থ পবিত্রতা। পবিত্র কুরআন পাকে আল্লাহ তায়ালা বলেন- وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা পবিত্রতা অবলম্বন কারী গর্ণ কে ভালো বাসেন। হাদীস শরীফে হুজুর )সঃ) বলেন – اَلطَّهُورُ شَطْرُ الْإِيمَانِ অর্থাৎ পবিত্রতা ইমানের অঙ্গ। কুরআন পাকে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

‎‫يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمُ إِلى آخر الآية‬‎

অর্থাৎ- হে ইমানদার বান্দাগণ যখন তোমরা নামাজ পড়ার ইরাদা করবে প্রথমে তোমাদের মুখমণ্ডলী কে এবং হাত দুটি কে কনুই সমেত ধুয়ে নাও। আর তোমাদের মাথাকে মাসাহ করার পর পা দুটি গাঁট সমেত ধুয়ে নাও।

বোঝা গেল এবাদাত উপাসনার আগে তহারত বা পবিত্রতা দরকার পবিত্রতা বিহিন এবাদাত গ্রহণ যোগ্য নয়। আর প্রধানত পানি দ্বারাই পবিত্রতা হাসিল করা হয়, তাই প্রথমে পানির মাসায়েল বয়ান করা হল।

তহারত কি মাসয়ালা :- নাপাক বস্তু যেমন গোবর, ইত্যাদি দ্বারা যদি পানি গরম করা হয় ঐ পানি পাক তা দ্বারা ওজু গোসল জায়েজ।

তহারত কি মাসয়ালা :- যদি কোন নির্জন স্থানে কোন ঘড়া বা কলসিতে পানি থাকে, নাপাক হওয়ার কোন সঠিক প্রমান না পাওয়া পর্যন্ত তা পাক হবে।

তহারত কি মাসয়ালা :- অমুসলিমদের পাত্রের পানি পাক। যদি তাদের পাত্রের অপবিত্রতা কোন ভাবে জানা যায় তাহলে নাপাক হবে।

তহারত কি মাসয়ালা :- ছোট বাচ্চা, সাধারণতঃ যাদের হাত পাক-নাপাকের কোন খেয়াল থাকেনা। যদি এমন শিশু পানিতে হাত দেয়, ঐ পানি পাক হবে। যদি তাদের হাতে নাপাকি থাকার প্রমান পাওয়া যায় তাহলে উক্ত পানি নাপাক হবে।

তহারত কি মাসয়ালা:- যদি কোন পানিতে গাছের পাতা পড়ার কারণে তার রং, স্বাদ অথবা গন্ধ পারিবর্তন হয়ে যায় বা যদি তিনটাই পরিবর্তন হয়ে যায় তাও ঐ পানি পাক হবে।

তহারত কি মাসয়ালা :- মায়ে মুস্তা’মাল ব্যবহৃত পানি- নিজে পাক কিন্তু অন্যকে পাক করতে পারেনা, ঐ পানি দ্বারা ওজু গোসল জায়েজ নয়। নাপাক জিনিষ পাক করতে পারে না।

তহারত কি মাসয়ালা:- আবদ্ধ অল্প পানি সামান্য নাপাকি পড়লেই নাপাক হয়ে যায়। যেমন এক ফোটা-পেশাব অথবা এক ফোটা রক্ত যদি অল্প আবদ্ধ পানিতে পড়ে তার রং স্বাদ ও গন্ধ সব ঠিক থাকা সত্ত্বেও সম্পূর্ণ পানি নাপাক হয়ে যাবে।

তহারত কি মাসয়ালা :- যে সমস্ত জন্তুর মধ্যে প্রবাহমান রক্ত আছে তাদের মৃত্যুর পর তারা নাপাক হয়ে যায়। অতএব যদি এই প্রকারের কোন জীব অল্প পানিতে পড়ে মারা যায় পানি নাপাক হয়ে যাবে। এমনই ঐ সমস্ত প্রাণী যাদের মধ্যে প্রবাহমান রক্ত নেই কিন্তু অন্য প্রাণীর রক্ত খেলে তাদের মধ্যে প্রবাহমান রক্ত হয়ে যায় যেমন- জোঁক। যদি রক্ত খাওয়ার পর অল্প পানিতে পড়ে মরে যায় তাহলে পানি নাপাক হয়ে যাবে।

তহারত কি মাসয়ালা :- অপবিত্র বস্তু থেকে যে সমস্ত প্রাণী জন্মায় ঐ প্রাণী নাপাক যেমন- পায়খানার পোকা ইত্যাদি।

তহারত কি মাসয়ালা :- অল্প পাক পানিতে কেউ থুথু ফেললে ঐ পানি পাক থাকে তা দ্বারা ওজু গোসল জায়েজ কিন্তু মাকরূহ হবে।

পানির মাসায়েল,কোন পানি উপযুক্ত গোসলের জন্য

ঝুটা পানি দিয়ে কিভাবে পাক হবে। মাসয়ালা কি ?

মাসয়ালা :- মুসলিম, অমুসলিম, ছোট, বড়, হায়েজ নেফাছ ওয়ালী নারী এবং জুনুবী পুরুষ সকল মানুষের ঝুটা পানি পাক তা দ্বারা ওজু গোসল সব কিছু জায়েজ।

 

মাসয়ালা :- কেউ মদ খাওয়ার পর পানিতে মুখ দিলে তা নাপাক হয়ে যায়। এমনই কোন অমুসলিম খিনজির খাওয়ার পর পানিতে মুখ দিলে পানি নাপাক হয়ে যায়।

 

মাসয়ালা :- ঘোড়া অথবা কোন হালাল পশু-পক্ষী এবং হালাল প্রাণী যদি তাদের মুখ পাক থাকে তাহলে তাদের ঝুটা পাক হবে।

 

মাসয়ালা:- যে সমস্ত প্রাণী খাওয়া হারাম অথচ ঘরে বাস করে যেমন বিড়াল ইঁদুর, এবং ঐ সমস্ত হালাল প্রাণী যা গৃহপালিত নয়, তাদের ঝুটা মাকরূহ তানজিহী।

 

মাসয়ালা:- পক্ষী ছাড়া যে সমস্ত প্রাণী বা জন্তু জঙ্গলে বাস করে যেমন বাঘ, সিংহ, চিতা, হাতি, শিয়াল ইত্যাদি এদের ঝুটা নাপাক।

 

মাসয়ালা:- যে সমস্ত প্রাণীর ঝুটা পাক, যদি তারা নাপাক খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে • পানিতে মুখ দেয় তাহলে ঐ পানি নাপাক হবে।

 

মাসয়ালা: গাধা এবং যে খচ্চর গর্দবীর পেট থেকে জন্ম নিয়েছে এদের ঝুটা মাশকুক। অর্থাৎ এমন পানির উপস্থিতিতে যদি অন্য পানি না থাকে তাহলে ওজু এবং তায়াম্মুম দুটাই করতে হবে।

 

মাসয়ালা :- যদি কাপড়ে নাজাসাতে গলীজা (গাঢ়-নাপাক) এক দিরহাম পারিমান এবং তরল হলে হাতের তালু সমান লেগে যায় তা সমেত নামাজ জায়েজ হয়ে যাবে কিন্তু মাকরূহ হবে। আর যদি নাজাসাতে খফীফা কাপড়ের এক চতুর্থাংশে লেগে যায় তাহলে নামাজ হবে কিন্তু মাকরূহ হবে। তার থেকে বেশি হলে নামাজ জায়েজ হবে না।

 

বিঃ দ্রঃ– কাপড়ের এক চতুর্থাংশ নির্নয় করা কালে খেয়াল রাখতে হবে যে কাপড়টির কি অংশ ভাগ আছে না একটাই যেমন লুঙ্গি, রুমাল এই প্রকার কাপড়ের সম্পূর্ণ কাপড়ের চতুর্থাংশ ধরতে হবে। আর যদি অংশ ওয়ালা হয়। যেমন জামা, পায়জামা এদের হাত পা আলাদা তাই এদের এক চতুর্থাংশ সম্পূর্ণ কাপড়ের হবে না বরং যে অংশে লেগেছে তার চতুর্থাংশ হবে।

 

মাসয়ালা:- মুরগীর ঝুটা পানি পাক। কিন্তু তার ঠোঁটে নাপাকি লেগে থাকা অনিবার্য হলে নাপাক হবে। আর যদি নাপাকি লেগে থাকা না থাকার সন্দেহ সমান হয় তাহলে ছাড়া মুরগীর এঁটো পানি মাকরূহ তাঞ্জিহী হবে। (আহসানুল ফাঃ ২/৪৩)

 

মাসয়ালা :- গ্রীষ্ম কালে উষ্ম এলাকায় সোনা রূপো ছাড়া অন্য ধাতুর পাত্রে সূর্য্যের তাপে উত্তপ্ত পানি ব্যবহার মাকরূহ তানজিহী। (আহঃ ফাঃ ২/৪৩)

 

মাসয়ালা :- যদি নলকুপ বা টিউবওয়েলে নাপাকি পড়ে যায় তাহলে তা থেকে এত পরিমান পানি বার করে ফেলে দিতে হবে যে তার দ্বারা কলটাকে তিন বার ধোওয়া সম্ভব হয়। অথবা তার উপর দিয়ে এত পানি ঢালতে হবে যেন ছাপিয়ে নীচে পড়ে যায়। (আহঃ ফাঃ ২/৫১)

 

মাসয়ালা :- পানিতে বসবাসকারী জন্তু পানিতে মারা গেলে পানি নাপাক

 

মাসয়ালা :- বর্ষা কালে রাস্তায় চলতে গিয়ে যদি রাস্তার কাদা মিশ্রত পানি কাপড়ে লেগে যায় তাহলে ঐ কাপড়ে নামাজ জায়েজ হবে।

 

‎‫وَفِي الْفَيْضِ طِينُ الشَّوَارِعِ عَفُوٌّ وَإِن مَلَأَ الثَّوْبَ لِلضَّرُورَةِ وَلَوْ‬‎

 

‎‫مُخْتَلِطاً بِالْعَدْرَاتِ وَتَجُوزُ الصَّلوةُ مَعَهُ (در المختار ص)‬‎ 

মাসয়ালা :- ঘুমন্ত মানুষের মুখের লালা পাক। কিন্তু মৃত ব্যক্তির মুখের লালা নাপাক।



ঝুটা পানি দিয়ে কিভাবে পাক হবে। মাসয়ালা কি ?

অপবিত্র বস্তুর মাসায়েল

মাসয়ালা:- পেশাব করার সময় যদি পেশাবের ছিটা শরীরে অথবা কাপড়ে লেগে যায় এবং তা সুচের আগার মত ছোট ছোট হয় অথবা চোখে না দেখা যায় তাহলে তা সহ নামাজ দুরুস্ত হয়ে যাবে। আর তার থেকে যদি বেশী হয় তাহলে নামাজ দুরুস্ত হবে না।

মাসয়ালা :- অপবিত্র হওয়ার কোন প্রমান না থকলে, অমুসলমানদের তৈরী করা খাদ্য বস্তু ও তাদের বরতন বা পাত্র পাক বলে ধরে নেওয়া হবে। তবে কোন পরহেজগার ব্যক্তি যদি তা না ব্যবহার করতে চান তাহলে পরহেজ করা ভালো।

মাসয়ালা:- ছোট ছেলে-মেয়ের পেশাব পায়খানা নাজাসাতে গলিজা।

মাসয়ালা:- মাছের রক্ত নাপাক নয়। নাপাক বস্তু পুড়ে ছাই হয়ে গেলে তা পাক হয়ে যায়। সাপের খোলশ পাক।

মাসয়ালা :- নাপাক বস্তু জালালে তার ধোঁয়া পাক।

মাসয়ালা :- নাপাক জিনিস হতে যে ভাপ উঠে তা পাক। ফল ফুটের পোকা পাক কিন্তু তা খাওয়া দুরুস্ত নয়।

মাসয়ালা:- মুরগী অথবা কোন পাখি জবেহ করার পর তার নাড়ি ভুড়ি বার করার পর গরম পানিতে সিদ্ধ করতে হবে এবং পাখনা ইত্যাদি পরিস্কার করতে হবে।

মাসয়ালা :- ঘোড়া ও এমন পশু যার গোস্ত হালাল এদের পেশাব এবং

হারাম পাখীর পায়খানা নাজাসাতে খফীফা। এই প্রকার নাজাসাতের হুকুম এই যে, যদি কাপড়ের এক চতুর্থাংশে লেগে যায় তাহলে নামাজ দুরুস্ত হবে কিন্তু মাকরূহ হবে।

মাসয়ালা :- কোন নাপাক জমিনের উপর পাক মাটি ফেলে ঢেকে দিলে যদি তার গন্ধ না বার হয় তাহলে ঐ মাটির উপরাংশ পাক হবে।

মাসয়ালা : নদী-খাল, পুকুর ইত্যাদির ধারে পেশাব-পায়খানা করা মাকরূহ।

মাসয়ালা :- পায়খানা পেশাব করার সময় চাঁদ সূর্য্যের দিকে মুখ করা মাকরূহ। (ফতাওয়ায়ে সিদ্দিকীয়া)

মাসয়ালা :- গরু জবাহ করার পর তার দোহনকৃত দুধ পাক এবং খাওয়া হালাল (ফাঃ আলমগিরী)

মাসয়ালা :- সুদখোর ও দেহ ব্যাবসায় উপার্জন কারীদের দাওয়াৎ খাওয়া হারাম (ফাঃ আলমগিরী)

শরীরের পবিত্রতা :- যেমন কোন কাপড় চোপড় জিনিস পত্রে নাপাকি লাগলে তা ধুয়ে পাক করতে হয় ঠিক তেমনি শরীর অপবিত্র হলে তাকেও পাক করতে হয়। শরীরের অপবিত্রতা প্রথমে দুই প্রকার।

প্রথম: বাইরের কোন নাপাকি লেগে শরীর অপবিত্র হওয়া। এর পাক করার পদ্ধতি হল খুব ভালো করে তা ধুয়ে ফেলা যেন ঐ নাপাকি শরীরে না থাকে।

দ্বিতীয়: শরীরের ভীতরের কোন নাপাকি বার হওয়ার কারণে অপবিত্র হওয়া যেমন- পেশাব পায়খানা ত্যাগ করা, বায়ু নির্গত হওয়া ইত্যাদি। একে হাদাসে আসগার বলা হয়। এতে অজু ভঙ্গ হয়। স্বপ্নদোষ, বীর্যস্খলন, স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি। একে হাদাসে আকবার বলা হয়। এতে গোসল ভঙ্গ হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top