সর্ব শ্রেষ্ঠ আমল কি

সর্ব শ্রেষ্ঠ আমল কি?

হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) বলেন একদা এক ব্যক্তি নবী করীম (সঃ) কে জিজ্ঞাসা করেন যে, সর্ব শ্রেষ্ট আমল কি ? তদুত্তরে হুজুর )সঃ) বলেন الصلوة নামাজ

ঐ ব্যক্তি আবার জিজ্ঞাসা করেন তার পর সর্ব শ্রেষ্ঠ আমল কি ? হুজুর (সঃ) বলেন الصلوة নামাজ। আবার জিজ্ঞাসা করেন তার পর সর্ব শ্রেষ্ঠ আমল কি ? হুজুর (সঃ) বলেন الصلوة নামাজ। তিনি বার বার এই রকম উত্তর

দেওয়ার পর উনি যখন আবার জিজ্ঞাসা করেন, তার পর সর্ব শ্রেষ্ঠ আমল কি? তখন উত্তরে হুজুর (সঃ) বলেন اَلْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ আল্লাহর পথে জিহাদ। (আহমদ, ইবনে হাব্বান)

নামাজের ব্যাপারে সহীহ বোখারীতে আছে-

قَالَ سَأَلْتُ النَّبِيَّ ﷺ أَيُّ الْعَمَلِ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ قَالَ الصَّلُوةُ عَلَى وَقُتِهَا قَالَ ثُمَّ أَيُّ قَالَ بِرُّ الْوَالِدَيْنِ قَالَ ثُمَّ أَيُّ قَالَ

 

الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ

 

অর্থাৎ রাবী বলেন, আমি নবী (সঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, মহিমান্বিত আল্লাহ তায়ালার নিকট কোন আমল সবচেয়ে প্রিয়? হুজুর (সঃ) বলেন, যথা সময়ে নামাজ পড়া। তিনি বলেন তার পর কোন আমল সমধিক প্রিয় ? হুজুর (সঃ) বলেন পিতা মাতার সহিত সদ্ব্যবহার করা। তিনি বলেন তারপরে কোন আমল? হুজুর (সঃ) বলেন, খোদার পথে জিহাদ করা।

 

তবরানীর একটি বর্ণনায় আছে-

 

وَاعْلَمُوا أَنَّ أَفْضَلَ أَعْمَالِكُمُ الصَّلُوةُ

 

হুজুর (সঃ) বলেন জেনে রাখ- তোমাদের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ আমল “নামাজ” স্বয়ং নবী (সঃ) ও এই নামাজকে শ্রেষ্ঠ আমল হিসাবে এত দীর্ঘ সময় নামাজের মধ্যে মশগুল থাকতেন যে, দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তাঁর কদম মোবারক ফুলে উঠত এবং নামাজের মধ্যে তাঁর দিল ও চোখ তৃপ্তি পেত।

 

قُرَّةُ عَيْنِي فِي الصَّلوة. তিনি বলেন ১০ শান্তি। ৩৩ নামাজের মধ্যেই আমার নয়ন ও মনের

 

رُوِيَ أَنَّهُ عَلَيْهِ الصَّلوةُ وَالسَّلَامُ قَالَ مَنْ تَرَكَ الصَّلوةَ حَتَّى مَضَى وَقْتُهَا ثُمَّ قَضَى عُذِّبَ فِي النَّارِ حُقْباً وَ الْحُقُبُ ثَمَانُونَ سَنَةٌ وَالسَّنَةُ ثَلْتُ مِائَةٍ

 

وَّ سِيُّونَ يَوْمًا كُلُّ يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ أَلْفَ سَنَةٍ – (مجالس الابرار)

 

অর্থঃ- হুজুর পাক (সঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি নামাজ তরক করে, যে তার ওয়াক্ত অতি বাহিত হয়ে যায়। পুনরায় তা কাজা করে নেয়। তাকে এক হুকবা পরিমান জাহান্নামে আজাব দেওয়া হবে। এক হুকবা সমান আশি বছর। এক বছর সমান তিন শত ষাট দিন। প্রত্যেকটা দিনের দৈর্ঘ্য হবে দুনিয়ার দিনের তুলনায় এক হাজার বছর।

 

জ্ঞাতব্য বিষয়ঃ- হুকবার আভিধানিক অর্থ হল দীর্ঘ মেয়াদী সময়। হাদিসের

 

বর্ণনা অনুযায়ী হিসাব করলে এক হুকবার পরিমান দুই কোটি অষ্টাশি লক্ষ বছর। এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা করলে যদি এই পরিমান শাস্তি ভোগ করতে হয়, তাহলে যারা শৈথিল্য বশতঃ নামাজ না পড়ে, তাদের কেমন শাস্তি পাওয়া উচিৎ সেটা একবার চিন্তা করলে সহজেই অনুমান করা যায়।নামাজ ইসলামের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করেছে।

সর্ব শ্রেষ্ঠ আমল কি?

নামাজ একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান বটে কিন্তু ঐ অনুষ্ঠানের মধ্যে কি সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার শিক্ষা রয়েছে, তা আমরা লক্ষ্য করি না। নামাজের মধ্যে আমরা সাম্যবাদ, বিশ্বভ্রাতৃত্ব, মৈত্রী ও ঐক্যের শিক্ষা পাই। মসজিদের মধ্যে ধনী, নির্ধন, শিক্ষিত ও অশিক্ষিত, পাপী তাপী, সুন্দর-কুৎসিত, ফর্সা- কালো, সকলেই পাশা-পাশি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একই লাইনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে হয়, সেখানে কোন ভেদাভেদ নেই। 

মসজিদে নামাজ কার্য্য সমাধার জন্য যার মধ্যে যোগ্যতা আছে সেই ঐ নামাজের এমামতি বা পরিচালনা কার্য্য করতে পারে। দেশের বাদশাহ যদি অযোগ্য হন, আর ছিন্ন মলিন বস্ত্র পরিহিত একজন ফকির যদি যোগ্যতা রাখেন তাহলে ঐ ফকিরকেই সকলে বিনা দ্বিধায় নামাজের ইমাম নিযুক্ত করবে। দেশের বাদশাহকেও ঐ ফকিরেরই পিছনে দাঁড়িয়ে তারই কদম কদম অনুসরণ করতে হবে। কি সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা কেমন আদর্শ ও উদারতা। প্রত্যেকেই ইমামের প্রতিটি কার্য্যের অনুসরণ করে, শুধু তাই নয়, সকলেই একই সঙ্গে ইমামের কদম কদম অনুসরণ করে, কেউ আগে, কেউ পরে, এরূপ নয়,

 

বরং যে ভাবে সৈন্য সামন্তগণ তাদের নেতার অনুসরণ করে থাকে। অধিকন্ত

 

প্রত্যেকেরই এক জাতীয় বেশভূষা, প্রত্যেকের মাথায় টুপি, কেমন সুন্দর

 

ঐক্য, মৈত্রী শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা নিহিত রয়েছে এই নামাজের মধ্যে।

 

সকলেই নীরব হয়ে কায়মনোবাক্যে ইমামের অনুসরণ করে বটে, কিন্তু ইমামের যদি কোন ত্রুটি হয়, তাহলে তার সেই ত্রুটি সংশোধনের

 

অবাধ স্বাধীনতা ও অধিকার প্রত্যেকটি অনুসারীকে দেওয়া হয়েছে। কি সুন্দর রাষ্ট্র ব্যবস্থা! ইসলাম দেশের নেতা রাষ্ট্রপতির আদেশ লঙ্ঘন করাকে আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘন করার সমতুল্য জ্ঞান করে, কিন্তু রাষ্ট্রপতির যদি কোন ত্রুটি বিচ্যুতি হয়, তাহলে জনসাধারনকে সেই ত্রুটি সংশোধনের অবাধ স্বাধীনতা ও অধিকার দেওয়া হয়েছে। নামাজের মধ্যে এই ভাবে সমাজ ব্যবস্থাও রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিহিত আছে বলেই জামায়াতে নামাজ পড়ার প্রতি বিশেষ তাকিদ ও উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। নামাজ শ্রেষ্ট উপাসনা হওয়ার মূল কারণ হল নামাজের মধ্যে যেমন আধ্যাত্মিক উন্নতির সর্বোচ্চ স্তরে আরোহন করার সুযোগ আছে তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্র কি ভাবে চালাতে হবে, তারও ট্রেনিং দেওয়া আছে।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top