তায়াম্মুম কি?
তায়াম্মুম কি:-পানি অভাবে অথবা পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে পবিত্র মাটি অথবা মাটি জাতীয় কোন পদার্থ দ্বারা ওজু অথবা গোসলের কাজ সম্পন্ন করা কে তায়াম্মুম বলা হয়।
আল্লাহ তায়ালা ওজু এবং গোসলে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য তায়াম্মুম জায়েজ করেছেন। কুরআন পাকে আল্লাহ বলেন-
فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيداً طَيِّباً
অর্থাৎ যদি তোমরা পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও।
Table of Contents
তায়াম্মুমের তিনটি ফরজ:-
১। নিয়ত করা
২। সম্পূর্ণ মুখমণ্ডল মাসাহ করা
৩। উভয় হাতের কনুই সমেত মাসাহ করা।
তায়াম্মুম কি শর্ত সমূহ:-
১। পানির অভাব হওয়া অথবা পানি ব্যবহারে অক্ষম হওয়া
২। তায়াম্মুম কারীর মুসলমান হওয়া
৩। মাটি জাত বস্তুর উপর তায়াম্মুম করা
৪। উক্ত বস্তু পাক হওয়া
৫। যদি চতুর্দিকে এক মাইলের ভিতর পানি থাকার সম্ভনা থাকে তার অন্বেষণ করা
৬। হাতের অধিকাংশ কমপক্ষে তিন আঙুল দ্বারা মাসাহ করা
৭। হায়েজ ইত্যাদির মত কোন উজর (কারণ) না থাকা।
তায়াম্মুম কি সুন্নাত সমূহ:-
মাসয়ালা:- মাটিতে দুই হাত মারার সময় “বিসমিল্লাহ” পড়া সুন্নাত।
মাসয়ালা:- দুই হাতের তালুকে মাটির উপর মারার পর তালু দ্বয়কে মাটির
উপর রেখে আগের দিকে অতঃপর পিছন দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া সুন্নাত।
মাসয়ালা:- মাটিতে হাত মারার পর হাত তুলে ঝেড়ে নেওয়া সুন্নাত।
মাসয়ালা:- মাটিতে হাত রাখার সময় আঙুল গুলি ফাঁকা করে রাখা সুন্নাত।
মাসয়ালা :- প্রথমে মুখ তার পর হস্তদ্বয় মাসাহ করা সুন্নাত।
মাসয়ালা:- মুখ মাসাহ করার পর মাটিতে হাত মেরে হাত মাসাহ করা সুন্নাত।
মাসয়ালা:- প্রথমে ডান হাত তার পর বাম হাত মাসাহ করা সুন্নাত।
মাসয়ালা :- বিশেষ করে মাটির উপরেই হাত মারা সুন্নাত।
মাসয়ালা:- লিখিত খাস নিয়মে মাসাহ করা সুন্নাত।
মাসয়ালা:- দাড়ি খেলাল করা সুন্নাত।
মাসয়ালা :- তায়াম্মুমের পূর্বে মেসওয়াক করা সুন্নাত।
মাসয়ালা :- তায়াম্মুমের নিয়াত করার সময় পাকি, নামাজ মুবাহ হওয়া, হাদাস বা নাপাকি দুর করা অথবা এমন আসল এবাদাতের নিয়ত করা সুন্নাত যা পবিত্রতা ছাড়া আদায় হয় না।
মাসয়ালা: পানির অভাবে তায়াম্মুম করলে ঐ তায়াম্মুম দ্বারা ফরজ, ওয়াজিব সুন্নাত, নফল সর্ব প্রকারের নামাজ জায়েজ হবে।
মাসয়ালা :- যদি জানাজা উপস্থিত হয় এবং ওজু করতে গেলে জানাজা নামাজ ছেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে তাড়াতাড়ি তায়াম্মুম করে নামাজে শরীক হয়ে যাবে। এই তায়াম্মুম দ্বারা ফরজ নামাজ বা কুরআন স্পর্শ জায়েজ নয়।
মাসয়ালা :- কুরআন শরীফ মুখস্থ পড়া, কুরআন শরীফ দেখে পড়া, কবর জিয়ারত করা, মাইয়্যেত দফন করা, কুরআন শরীফ লেখা, আজান দেওয়া বা সালামের জওয়াব দেওয়ার উদ্দেশ্যে তায়াম্মুম করলে তা দ্বারা নামাজ পড়া জায়েজ হবে না।
মাসয়ালা :- পীড়িত ব্যক্তিকে তায়াম্মুম করিয়ে দিলে পীড়িত ব্যক্তি নিজের তায়াম্মুমের নিয়াত করবে।
মাসয়ালা :- হাতে আংটি বা কোন গহনা থাকলে তা খুলে ফেলতে হবে। যদি আঙুলের ফাঁকে মাটি না পৌঁছে থাকে তাহলে খেলাল করা ওয়াজিব হবে।
মাসয়ালা :- তায়াম্মুমের জন্য প্রথম বার যেখানে হাত মারা হয়েছে ২য় বার ঠিক সেখানে হাত মারলেও তায়াম্মুম জায়েজ হবে।
তায়াম্মুম কি জায়েজ হওয়ার কারন
মাসয়ালা : যদি কোন ব্যক্তি পানি হতে ৪৮০০ হাত দুরে হয়। তিনি যেথায় অবস্থান করছেন তা শহর হোক বা শহরের বাইরে হোক তিনি মোসাফির হন বা মুকীম তার জন্য তায়াম্মুম করা জায়েজ। যদি উক্ত পানির স্থানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে নামাজ ছেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয় তাহলে তায়াম্মুম করে নামাজ পড়ে নেবেন। তবে পানির স্থানে পৌঁছে ওজু করে পুণরায় নামাজ পড়বেন।
মাসয়ালা :- যদি পরীক্ষা দ্বারা জানা যায় অথবা কোন মুসলমান অভিজ্ঞ ডাক্তারের কথায় দৃঢ় ধারণা হয় যে, পানি ব্যবহার করলে, অসুখ বেড়ে যাবে অথবা উপশম হতে দেরী হবে, এমতাবস্থায় তায়াম্মুম জায়েজ হবে।
মাসয়ালা:- যদি গরম পানির ব্যবস্থাপনায় অক্ষম হয় এবং পানি ব্যবহার করলে অতিরিক্ত শীতে মৃত্যু অথবা রোগ বৃদ্ধির সম্ভবনা হয় তাহলে তায়াম্মুম করা জায়েজ।
মাসয়ালা:- যদি পানির কাছে কোন হিংস্র জন্তু বা শত্রু অথবা সাপ থাকে, পানি নিতে গেলে জীবণ নাশের আশঙ্কা থাকে তাহলে তায়াম্মুম করা জায়েজ। এমনই ভাবে যদি পানি নিতে যায় তাহলে নিজের ইজ্জত আবরু বা নিজের জিনিসপত্র বা গচ্ছিত অর্থ বিনাশ হওয়ার আশঙ্কা হয় তায়াম্মুম করা যেতে পারে।
মাসয়ালা :- পানি আছে কিন্তু তা দ্বারা ওজু করলে পিপাসায় নিজে অথবা তাঁর বাহক জন্তু কাতর হওয়ার আশঙ্কা থাকলে তায়াম্মুম করা জায়েজ।
মাসয়ালা :- যদি ওজু করতে গেলে জানাজা নামাজের এক তকবীরও না পাওয়ার সম্ভবনা থাকে তাহলে তায়াম্মুম করে শরীক হবে। আর যদি এক তকবীর পাওয়ার সম্ভনা থাকে তাহলে জায়েজ হবে না।
মাসয়ালা :- যদি কোন ব্যক্তি ওজু করতে গেলে ঈদের নামাজের কোন অংশও না পাওয়ার সম্ভবনা হয় তাহলে তায়াম্মুম করবে।
মাসয়ালা :- পানি থাকা সত্ত্বেও ঘুমাবার জন্য, সালাম করার জন্য, সালামের জওয়াব দেওয়ার জন্য যদি কেউ তায়াম্মুম করে তা জায়েজ হবে।
মাসয়ালা : যদি ইমাম কিংবা মোক্তাদির ঈদের নামাজ শুরু করার পর ওজু নষ্ট হয়ে যায় পুনরায় ওজু করতে গেলে সময় পেরিয়ে যাওয়ার আশঙ্খা হয় তাহলে তায়াম্মুম করা জায়েজ হবে।
মাসয়ালা :- সংগ্রহকৃত পানির পরিমান যদি এতটুকু না হয় যা দ্বারা মুখ, হাত, পা ও মাথা মাসাহ করা সম্ভব হয় তাহলে তায়াম্মুম করতে হবে।
মাসয়ালা: যত দিন পর্যন্ত পানি না পাওয়া যায় অথবা পানি ব্যবহার করতে সক্ষম না হয় ততদিন পর্যন্ত তায়াম্মুম করতে হবে।
মাসয়ালা :- পানি দ্বারা যে পবিত্রতা অর্জিত হয়, তায়াম্মুম দ্বারা পানির অভাবে বা ব্যবহারে অক্ষমাতার কারণে সেই পাবিত্রতা অর্জিত হয়। এই রূপ ধারনা ভ্রান্ত যে তায়াম্মুম দ্বারা ভালো ভাবে পাকি হাসিল হয় না।
মাসয়ালা :- যে ব্যক্তি পানি ও মাটি উভয় ব্যবহারে অক্ষম সে ব্যক্তি বিনা ওজু ও তায়াম্মুমে নামাজ পড়ে নেবেন। তবে পরে ঐ নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবে।
মাসয়ালা:- যে ব্যক্তি শেষ সময়ে পানি পাওয়ার আশা রাখে তিনি মুস্তাহাব সময়ের শেষাংশ পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।
তায়াম্মুম কি বাতিল হওয়ার কারন
তায়াম্মুম যেহেতু দুই প্রকার
১। গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম
২। ওজুর পরিবর্তে তায়াম্মুম।
তাই যদি তায়াম্মুম ওজুর বদলে হয়, তাহলে যে যে কারণে ওজু নষ্ট হয় সেই সেই কারণে উক্ত তায়াম্মুম নষ্ট হয়ে যাবে। আর যদি তায়াম্মুম গোসলের বদলে হয়, তাহলে যে যে কারণে গোসল নষ্ট হয় সেই সেই কারণে উক্ত তায়াম্মুম নষ্ট হয়ে যাবে।
আর যদি তায়াম্মুম ওজু গোসল উভয়ের তরফ থেকে হয়, তাহলে যদি ওজু ভঙ্গের কারণ পাওয়া যায় তাহলে ওজু নষ্ট হবে। আর যদি গোসল নষ্ট হওয়ার কারণ পাওয়া যায় তাহলে ওজু গোসল উভয়ের তায়াম্মুম নষ্ট হয়ে যাবে।
মাসয়ালা :- ওজু ও গোসলের পরিমান পানি পাওয়া গেলে ওজু ও গোসলের তায়াম্মুম নষ্ট হয়ে যাবে।
মাসয়ালা :- যে অসুবিধার কারণে তায়াম্মুম মুবাহ হয়েছিল সেই অসুবিধা দুরিভূত হলেই তায়াম্মুম নষ্ট হয়ে যায়।