হায়েজ, নেফাস ও ইস্তেহাজার মাসয়ালা মাসায়েল,বিধান

হায়েজ, নেফাস ও ইস্তেহাজার মাসয়ালা

হায়েজ কি ? বালেগা স্ত্রীলোকের গর্ভশয় হতে প্রসবকাল ব্যতীত অন্য সময় অসুখ ছাড়া যে রক্ত নির্গত হয় তাকে হায়েজ বলে।বাচ্চা হওয়ার পর ৪০ দিন যে রক্ত নির্গত হয় তাকে নেফাস বলে ,

অতএব এই সময় সীমার বাইরে যদি কোন রক্ত দেখা যায় তাহলে তা হায়েয নয় বরং “ইস্তেহাজা

স্ত্রীলোকের বালেগা হওয়ার চিহ্ন:- কোন কোন স্ত্রী লোকের স্বপ্নদোষ হলে তার বালেগা হওয়া বোঝা যায় আবার কারো কারো হায়েয এলে তার বালেগা হওয়া বোঝা যায়।

হায়েযের সময় নয় বৎসর বয়স থেকে শুরু হয় এবং ৫০ থেকে ৫৫ অথবা ৬০ বৎসর পর্যন্ত থাকে। অতএব এই সময় সীমার বাইরে যদি কোন রক্ত দেখা যায় তাহলে তা হায়েয নয় বরং “ইস্তেহাজা”।

ইস্তেহাজা কি? হায়েযের নিম্নসীমা তিন দিন তিন রাত। কমপক্ষে হায়েয তিন দিন তিন রাত হয়। এর থেকে কম হলে তা হায়েয নয় বরং “ইস্তেহাজা”।

হায়েযের  উর্দ্ধসীমা দশ দিন দশ রাত। যদি উক্ত সময় সীমার বেশী রক্ত দেখা দেয় তাহলে তা হায়েয নয় বরং ইস্তেহাজা।

হায়েজ অবস্থায় নামাজ রহিত হয়ে যায়। বুজুর্গানে দ্বীনগণের মতে উক্ত সময়ে হায়েয ওয়ালী নারী কে প্রত্যেক নামাজের সময় ওজু করে পাটিতে বসা উচিৎ যাতে নামাজের অভ্যাস ভঙ্গ না হয়ে যায়।

হায়েয অবস্থাতে রমজান মাসের রোজা হলে রোজা রাখতে হয় না বটে কিন্তু তা পরবর্তী সময়ে কাজা করে দিতে হয়। হায়েয অবস্থায়ের নামাজ মাফ হয় রোজা মাফ হয় না।

হায়েজ অবস্থায় এক আয়াত বা ততোধিক, তিলাওয়াতের উদ্দেশ্যে পড়া না জায়েজ।

মাসয়ালা :- পৃথক পৃথক ভাবে এক একটি শব্দ পাঠ করা জায়েজ।

মাসয়ালা :- দোয়ার বিষয়বস্তু বিশিষ্ট আয়াত দুওয়ার উদ্দেশ্যে পড়া জায়েজ আছে।

মাসয়ালা :- দুওয়ায়ে মাসুরা সমূহ পাঠ করা বা তা স্পর্শ করা বা অন্যান্য তাসবীহ পাঠ করা জায়েজ।

 মাসয়ালা :- যদি হায়েজ ওয়ালি নারীকে কুরআন শরীফের আয়াত পড়ে ফুঁক দেওয়া হয় বা ঝাড়ানো হয়, তবে তা জায়েজ হবে।

মাসয়ালা: কোন নারীর যদি হায়েজের সময় সীমার মধ্যে অভ্যস্থ দিনের পর রক্ত দেখা দেয় তাহলে তা হায়েজ হবে। যেমন- ফাতিমার অভ্যাস মাসে চার দিন করে খুন আসে।

 নিয়মানুযায়ী খুন শুরু হল এবং বন্ধ হল। এবার সে নামাজের শেষ সময়ে গোসল করে নামাজ পড়তে লাগল, তারপর যদি পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্ট বা নবম ও দশম দিনে পুণরায় খুন দেখা দেয় তাহলে তা হায়েয বলে গণ্য হবে।

মাসয়ালা :- যদি কোন নারীর অভ্যস্থ সময় সীমার পূর্বেই খুন বন্ধ হয়ে যায় তাহলে খুন বন্ধ হওয়া থেকেই নামাজ রোজা ফরজ হবে, কিন্তু সহবাস জায়েজ হবে না। নামাজ গুলিকে মুস্তাহাব ওয়াক্তের শেষ সময় পর্যন্ত দেরী করে পড়া ওয়াজিব।

মাসয়ালা: যদি কোন নারীর দশ দিন সম্পূর্ণ খুন আসার পর খুন বন্ধ হয় তাহলে স্বামী চাইলে তখনই সহবাস করতে পারে কিন্তু গোসল করার পর সহবাস করা মুস্তাহাব। 

কিন্তু দশদিন সম্পূর্ণ হওয়ার আগে যদি খুন বন্ধ হয়, তাহলে স্ত্রীকে গোসল করার সুযোগ দিতে হবে অথবা এতটা সময় দিতে হবে যাতে তার উপর একটি নামাজের কাজা ফরজ হয়।

মাসয়ালা:- যদি হায়েয অথবা নেফাস অবস্থায় সহবাস করে ফেলে তাহলে খালেস দিলে ভবিষ্যতে এমন না করার তওবা করবে। তবে এক দিনার অথবা অর্দ্ধেক দিনার সাদকা করে দেওয়া মুস্তাহাব।

নেফাস:- স্ত্রীলোকের সন্তান প্রসব হওয়ার পরে বা সন্তানের অধিকাংশ শরীর বার হওয়ার পর, যে রক্ত বার হয় তাকে নেফাস বলে।

মাসয়ালা:- নেফাসের কোন নিম্ন সীমা নির্দিষ্ট সময় নেই। উপরী সীমা ৪০ দিন। অর্থাৎ সন্তান প্রসবের পর বেশী থেকে বেশী ৪০ দিন রক্ত বার হতে পারে তার বেশী নয়।

মাসয়ালা:- যদি কোন নারীর ৪০ দিনের থেকে বেশী রক্ত বার হয় তাহলে ৪০ দিন নেফাস এবং ততোধিক দিনের রক্ত কে ইস্তেহাজা বলা হবে।

মাসয়ালা :- নেফাসের সময় ও তার উপর হতে নামাজ মাফ হয়ে যায় কিন্তু রমজানের রোজা মাফ হয়না, ঐ সময় রোজা রাখতে হয় না তবে পরে কাজা করে দিতে হয়।

Table of Contents

হায়েজ, নেফাস ও ইস্তেহাজার বিধান

আয়েছা বা ঋতু রহিতা:-

 যে নারীর হায়েযের বয়স সীমা পার হয়ে হায়েয বন্ধ হয়ে গেছে তাকে আয়েছা বলা হয়।

 

মাসয়ালা: যদি আয়েছা নারীর রক্ত আসে এবং তা কালো অথবা গাঢ় লাল হয় তাহলে তা হায়েজ হবে। সবুজ বা মেটে রংয়ের রক্ত দেখা দিলে তা হায়েয হবে না। কিন্তু যদি পূর্বে তার হায়েজের রং ঐ রূপ হয়ে থাকে তাহলে তা হায়েজ হবে।

 

ইস্তেহাজা :- পীড়া বশতঃ যে রক্ত শিরা হতে বার হয়ে যোনি দ্বারা নির্গত হয় তাকে ইস্তেহাজা বলে।

 

মাসয়ালা :- যদি কোন নারীর হায়েযের সময় সীমা নির্দিষ্ট হয় এবং হঠাৎ ঐ নিয়ম ব্যতিক্রম হয়ে দশ দিনের বেশী রক্তস্রাব হয় তাহলে দশ দিন হায়েজ এবং বাকি দিন গুলি ইস্তেহাজা হবে।

 

মাসয়ালা :- যদি কোন নারীর নেফাসের সময় সীমা নির্দিষ্ট হয় এবং হঠাৎ সময় সীমা পেরিয়ে ৪০ দিনের অধিক রক্তস্রাব হয় তাহলে তার নেফাস নিয়মিত দিন গুলি হবে আর অতিরিক্ত দিন গুলি ইস্তেহাজা হবে।

 

মাসয়ালা :- কোন হিজড়ার নারী-পুরুষ কোনটাই সাব্যস্ত না হয় এবং যদি তার রক্তস্রাব হয় তাহলে তাকে হায়েয বলা হবে না বরং ইস্তে হাজা হবে।

 

মাসয়ালা :- প্রসব কালে বাচ্চার অধিকাংশ শরীর না বার হওয়া পর্যন্ত যে রক্ত বার হয় ঐ রক্ত কে ইস্তেহাজা বলা হয়।

 

মাসয়ালা :- গর্ভবতী নারী ও নয় বৎসরের কম বয়স্ক মেয়ে বা ঋতুরহিতা নারীর যদি রক্তস্রাব হয়, তাকে ইস্তেহাজা বলে গণ্য করা হবে।

 

মাসয়ালা:- দুই হায়েযের মধ্যে কার সময় যখন নারীগণ পাক থাকেন, তাকে “তোহ্” বল হয়। এই তোহরের নিম্ন সীমা ১৫ দিন অর্থাৎ কমপক্ষে ১৫ দিন হয়। আর উর্দ্ধসীমা কোন নির্দিষ্ট নেই।

 

মাসয়ালা:- যদি কোন মেয়ের হায়েয আরম্ভ হওয়ার পর থেকেই অবিশ্রান্ত রক্তস্রাব হতে থাকে, তাহলে সে প্রথম ১০ দিন হায়েজ এবং বাকী দিন গুলি ইস্তেহাজা বলে মনে করবে।

 

মাসয়ালা :- যে নারীর ইস্তেহাজা হয় তাকে মুস্তাহাজা বলা হয়। যদি মুস্তাহাজা হয় তাহলে দেখতে হবে যে, এটা কি তার জীবনের প্রথম খুন আসল, না আগেও আসত, যদি প্রথম এসে থাকে তাহলে প্রত্যেক মাসের প্রথম ১০ দিন হায়েয বলে ধরে নেবে এবং ঐ দিন গুলিতে নামাজ রোজা কুরআন তিলাওয়াৎ বা কুরআন শরীফ স্পর্শ করবে না। 

বাকী দিন গুলিতে গোসল করে নামাজ রোজা শুরু করবে তবে প্রত্যেক ওয়াক্তে নূতন ওজু করবে এবং ঐ ওজুতে যত ইচ্ছা নফল, ফরজ, কুরআন শরীফ তিলাওয়াৎ ইত্যাদি করবে। আবার অন্য নামাজের সময় এলে নূতন ওজু করবে।

 

মাসয়ালা :- যদি আগেও খুন এসে থাকে তাহলে দেখতে হবে যে তার

 

অভ্যস্ত কোন দিন আছে না নেই, অর্থাৎ প্রত্যেক মাসে কোন তারিখ থেকে কোন তারিখ কত দিন হায়েয আসত মনে আছে, না নেই? যদি অভ্যস্ত হয় এবং দিন তারিখ মনে থাকে তাহলে প্রত্যেক মাসে নির্দ্ধারিত অভ্যস্ত দিন গুলি হায়েয হবে এবং বাকী দিন গুলিতে বর্ণিত নিয়মানুযায়ী নামাজ রোজা করবে।

নাপাক অবস্থায় যা যা নিষিদ্ধ

নাপাক অবস্থায় যা যা নিষিদ্ধ

মাসয়ালা :- বিনা ওজুতে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ অথবা কুরআন শরীফের কোন পারা বা পারার কোন অংশ স্পর্শ করা হারাম।

মাসয়ালা: যদি কোন কাগজে অথবা কোন কাপড়ে পূর্ণ এক আয়াত লেখা থাকে আর বাকী জায়গা খালি থাকে তাহলে ঐ খালি জায়গা স্পর্শ করা যেতে পারে তবে আয়াতে হাত লাগানো জায়েজ নয়।

মাসয়ালা:- যদি ছোট বাচ্চা বিনা ওজুতে কুরআন পাক স্পর্শ করে, তাহলে জায়েজ কিন্তু আদবের জন্য এবং তা’লিম দেওয়ার জন্য ওজু করে ছুঁতে দেওয়া উচিৎ।

মাসয়ালা :- বিনা ওজুতে কুরআন শরীফের আয়ত লেখা বা ঐ ধরণের তাবিজ লেখা না জায়েজ। যাকে দেওয়া হবে তাকেও ওজু করতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে সিদ্দীকিয়া)

মাসয়ালা :- জুনুবি অর্থাৎ নাপাক ব্যক্তি কিছু খেতে চাইলে বিনা গোসলে হাত মুখ ধুয়ে কুল্লি করে খাবে, তবে ওজু বা তায়াম্মুম করে খাওয়া ভালো।

মাসয়ালা :- না পাকি অবস্থায় দোয়ার নিয়তে আল হামদুলিল্লাহ পড়া বা দোয়ার অন্যান্য আয়াত পড়া জায়েজ আছে।

মাসয়ালা :- বিনা ওজুতে তফসীরের কিতাব ছোয়া মাকরূহ তাহরিমী আর তরজমা ছোঁয়া হারাম (ফাতাওয়ায়ে সিদ্দিকীয়া ১ম খণ্ড- পূঃ ৩৪)

মাসয়ালা :- গোসল ফরজ হলে ঐ অবস্থাতে নামাজের পাটি ছোঁয়া জায়েজ আছে।

মাসয়ালা :- নাপাক অবস্থাতে কুরআন শরীফের আয়াত দ্বারা ঝাড় ফুঁক করা জায়েজ আছে।

মাসয়ালা :- ওজু না থাকলে শরীর থেকে পৃথক কোন কাপড় যেমন- রুমাল ইত্যাদি দ্বারা কুরআন শরীফ ধরা জায়েজ হবে।

মাসয়ালা :- বিনা ওজুতে কুরআন শরীফ তেলাওয়াৎ করা জায়েজ কিন্তু স্পর্শ করা জায়েজ নয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top