প্রকৃত জাকাতের হকদার কারা,2024 সালে।

আল্লাহ তাবারক অতায়ালা যেমন জাকাত ফরজ করেছেন ঠিক তেমনই জাকাতের হকদার যারা তাদের কে দেওয়া জরুরী ও আবশ্যক করেছেন। যদি জাকাতের হকদার ছাড়া অন্য ব্যক্তিকে জাকাত দেওয়া হয় তাহলে জাকাত আদায় হবে না।

 

জাকাতের হকদার কারা এ সম্বদ্ধে কুরআন শরীফের নিচের আয়াতে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। আর ফিকাহতত্ত্ব বিদগণ যা কিছু তাফসীর বা ব্যাখ্যা পেশ করেছেন এই আয়াত কে মূল হিসাবে রেখেই করেছেন।

Table of Contents

আল্লাহ তায়ালা বলেন-

إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَ الْمُؤلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ

অর্থাৎ সাদকা (জাকাতের মাল) ফকীর মিসকিন, যারা জাকাত আদায় ও তার সংরক্ষণ ইত্যাদি কাজে লেগে থাকেন, যাদের অন্তরকে আকৃষ্ট করা উদ্দেশ্য, দাস মুক্তি, ঋণী ব্যক্তি, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের জন্য।

মাসয়ালা :- সমস্ত তাফসীরবিদগণের মতে উক্ত আয়াতে সাদকা বলতে ওয়াজিব বা ফরজ সাদকা অর্থাৎ জাকাত উদ্দেশ্য।

অতএব ওয়াজিব সাদকা বা জাকাত বর্ণিত ব্যক্তিদের কে দিতে হবে। তবে যদি নফল সাদকা হয় তাহলে এছাড়া অন্য জনকেও দেওয়া যেতে পারে।

মাসয়ালা :– ওয়াজিব বা ফরজ সাদকা ঐ গুলোকে বলা হয় যার ওয়াজিব অথবা ফরজ হওয়া শরীয়ত হতে বর্ণিত। যেমন জাকাত সাদকা ফিত্র (ফিত্রা) মান্নতের সাদকা। আর যে সাদকা মানুষ নিজ তরফ থেকে দান করেন তাকে নফল সাদকা বা দান বলা হয়।

(১) মোয়াল্লাফাতে কুলুবের হুকুম 

অর্থাৎ যাদের অন্তরকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে জাকাত দেওয়া হতো তাদের হুকুম বাতিল হয়ে গেছে। হজরত আবু বকর (রাঃ) এঁর খেলাফত কালে, হজরত আবু বকর (রাঃ) ও হজরত উমার ফারুক (রাঃ) নিষিদ্ধ করে দিয়ে ছিলেন। সেই অনুযায়ী ইমাম আজম আবু হানীফা (রঃ) ও ইমাম মালিক (রঃ) দ্বয়ের মত, যে উক্ত প্রকারটি জাকাতের হকদার হতে রহিত হয়েছে। 

(২) রেকাব অর্থাৎ দাস মুক্তির বিষয়টি এযুগে পাওয়া যায় না 

(৩) আমেলীন অর্থাৎ জাকাত আদায় কারী বর্তমান ভারতে এ হুকুম প্রযোজ্য নয়। 

জাকাত কাকে বলে ?

১। ফকীর:– যে ব্যক্তি কোন নেসাবের মালিক নন কিন্তু তিনি একে বারে নিঃস্বও নন।

২। মিসকীন :– এমন ব্যক্তি যার কাছে কিছুই নেই। এমন কি পরবর্তি বেলায় খাওয়ার মত দ্রব্যও যার কাছে নেই।

৩। গরিমীন:– এমন ব্যক্তি যার উপর অন্যের ঋণ আছে এবং সে চাইছে কিন্তু তার কাছে ঋণ পরিশোধ করার মত মাল নেই। তাকেও জাকাত দেওয়া জায়েজ।

৪। ফি সাবিলিল্লাহ:– যেমন- কোন ব্যক্তি অর্থ অভাবে জিহাদে শরীক হতে পারছেন না বা কেউ হজ্বের উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বার হওয়ার পর পথে কোন কারণে নিস্বঃ হয়ে পড়েছেন বা যারা দ্বীনি ইলম শিক্ষা করছেন কিন্তু গরীব হওয়ার জন্য অর্থাভাবে তারা শিক্ষা অর্জন করতে পারছে না তাদের কে জাকাত দেওয়া জায়েজ।

৫। ইবনে সাবিল (মুসাফির) :- এমন ব্যক্তি যে প্রকৃত পক্ষে ধনী কিন্তু উপস্থিত তার কাছে কিছুই নেই। যেমন কোন ধনী ব্যক্তি সফরে বার হওয়ার পর পথে তার সমস্ত মাল চুরি বা ছিন্তাই হয়ে গেছে।

মাসয়ালা :– জাকাত দাতার এখতিয়ার তিনি উক্ত হকদারদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা জাকাত দিতে পারেন। প্রত্যেক প্রকারের হকদার কে দেওয়া জরুরী নয়।

মাসয়ালা :- জাকাতের মাল উক্ত প্রকার লোক ছাড়া অন্য কাউকে দেওয়া দুরুস্ত নয়।

মাসয়ালা :- জাকাতের মাল দ্বারা মসজিদ বানানো জায়েজ নয়।

মাসয়ালা :- জাকাতের মাল দ্বারা মাইয়্যেতের কাফন খরীদ করা বা তার ঋণ পরিশোধ করা জায়েজ নয়।

মাসয়ালা :– জাকাতের সমস্ত মাল এক জনকে দিয়ে ধনী বানিয়ে দেওয়া বা নেসাবের মালিক বানিয়ে দেওয়া উচিৎ নয় বরং মাকরূহ।

মাসয়ালা :- জাকাতের মাল এমন ব্যক্তি কে দেওয়া জায়েজ নয় যার সহিত পিতা, পুত্র, মাতা, সন্তান, দাদা, নাতী, স্বামী, স্ত্রী, ইত্যাদি সম্পর্কে আছে।

মাসয়ালা :- উক্ত সম্পর্ক ছাড়া আত্মীয় হকদার হলে তাদের কে জাকাত দেওয়া উত্তম। যদি আত্মীয় জাকাতের মাল শুনলে অসুন্তষ্ট হয় তাহলে তার সঙ্গে জাকাত প্রকাশ না করে অন্য ভাবে দিলে জায়েজ হবে।

মাসয়ালা :- কোন অমুসলিম ফকির কে জাকাতের মাল দেওয়া জায়েজ নয়। তবে নফল সাদকা দেওয়া জায়েজ হবে।

মাসয়ালা :– বেনামাজী জাকাতের হকদার হলে তাকে জাকাত দেওয়া জায়েজ হবে।

মান্নতের সাদকা কাকে দিতে হয়।

অন্যান্য এবাদাতের ন্যায় সাদকার মান্নত করলে তা ওয়াজিব হয়ে যায়। যদি উক্ত কাজ পূর্ণ হয় তাহলে সাদকা দেওয়া ওয়াজিব।

মাসয়ালা :– মান্নতের সাদকা ঐ সমস্ত ব্যক্তিকে দেওয়া জায়েজ যাদের কে জাকাত দেওয়া জায়েজ।

মাসয়ালা :– যে কাজকে উদ্দেশ্য করে মান্নত করা হবে যদি তা পূর্ণ হয় তাহলে উক্ত সাদকা খায়রাত করা ওয়াজিব নচেৎ ওয়াজিব নয়।

প্রভিডেন্ট ফাণ্ডের জাকাতের মাসায়েল

গভর্ণমেন্ট প্রভিডেন্ট ফান্ড:- গভর্ণমেন্ট প্রভিডেন্ট ফাণ্ডের টাকা কর্মচারীর হাতে আসার পর ১বছর অতিবাহিত হলে তার উপর জাকাৎ প্রযোজ্য হবে।

মাসয়ালা :– ব্যাঙ্ক ফিক্স ডিপোজিট, সেভিং সার্টিফিকেট, প্রাইজ বণ্ড এবং ইনসিওরেন্স এসমস্ত শরিয়াত অনুযায়ী সুদী কারবার বা সুদী ঋণ। তাই আসল টাকার উপর জাকাত ফরজ এবং ইন্টারেস্ট হারাম হওয়ার কারণে বিনা ছওয়াবের নিয়াতে গরীবদের সাদকা করে দেওয়া ওয়াজিব।

বিভিন্ন যাকাতের সম্মন্দে জরুরী মাসায়েল

মাসয়ালা :- কারখানার মেশিন এবং ঘর তৈরী করতে যে মূল্য খরচ হয়েছে তার উপর জাকাত ওয়াজিব নয়।

 

মাসয়ালা :– যদি কোন ব্যক্তি নিজের জাকাতের টাকা অন্য কারো হাতে ফকীর মিসকিনদের বন্টন করার জন্য দেয় তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে সেই টাকাই পরিবর্তন না করে গরীবদের কে দিতে হবে।

 কিন্তু যদি সে মালিকের নিকট হতে পরিবর্তনের অনুমতি প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য ভাবে নিয়ে নেয় তাহলে জায়েজ আছে। এরকম অবস্থায় যদিও মালিকের তরফ থেকে অপ্রকাশ্য অনুমতি থাকে তাও প্রকাশ্য অনুমতি নেওয়া উচিৎ।

মাসয়ালা :- ব্যবসার উদ্দেশ্যে প্লট খরিদ করে রাখলে তার মূল্য যদি নেসাব পরিমান হয় তাহলে তার উপর জাকাত ফরজ হবে।

 

মাসয়ালা :- পল্ট্রি ব্যবসার জন্য যে ঘর তৈরী করা হয় বা ঐ সম্পর্কিত মাল বা জিনিষ পত্রের উপর জাকাত ওয়াজিব নয়। মুরগী বা মুরগীর বাচ্চা খরীদ করার সময় যদি স্বয়ং ঐ গুলো কে বড় করে বিক্রি করা উদ্দেশ্য হয় তাহলে উক্ত মুরগীর মোট মূল্যের উপর জাকাত ওয়াজিব হবে।

কিন্তু যদি ঐ মুরগী বড় করে তার ডিম বিক্রি বা বাচ্চা বিক্রির উদ্দেশ্যে হয় তাহলে উক্ত মুরগীর মূল্যের উপর জাকাত ওয়াজিব হবে না। বরং আমদানীর উপর জাকাত ওয়াজিব হবে। (আঃ ফাঃ ৪/ ৩১০)

 

মাসয়ালা :- পুকুরে মাছ অথবা মাছের পোনা ব্যবসার উদ্দেশ্যে ক্রয় করে ফেলা হয় তাহলে তার মূল্যের উপর জাকাত ওয়াজিব হবে। (আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৩১০)

 

মাসয়ালা :– যদি মাদ্রাসা পরিচালক বিভিন্ন লোকের নিকট হতে জাকাত আদায় করে নিয়ে আসেন এবং অতি সাবধানতা সত্বেও যদি তা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে মাদ্রাসা পরিচালক তার জামিন হবেন না। (ফাঃ মাহঃ৩/৪৭)

 

মাসয়ালা :- মাতা পিতা যদি গরীব হন জাকাতের হকদার হন তাও তাদের কে জাকাত দেওয়া জায়েজ নয়। বরং পুত্রের উপর তাদের ভরন পোষণ দেওয়া ওয়াজিব। (ফাঃ মাহমুদিয়া ৩/৩৫)

 

মাসয়ালা :- জাকাতের পয়সা দ্বারা মোদার্রেস বা শিক্ষাকর্মীদের বেতন দেওয়া জায়েজ নয়। বরং হকদার তালিবে ইলমদের উপর খরচ করা একান্ত প্রয়োজনে হিলা তামলীক করে ব্যবহার করা উচিৎ।

মাদ্রাসা পরিচালকদের এর প্রতি খুব খেয়াল রাখা দরকার কারণ তাঁরা হলেন সমাজের আমীন। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ৩/৫৫)

 

মাসয়ালা :- স্বামী স্ত্রীকে দেন মোহর আদায় করে দিলে যদি তা নেসাব পরিমান হয় এবং এক বছর অতিবাহিত হয় তাহলে তার উপর জাকাত ফরজ হবে।

 

মাসয়ালা :- মাতা-পিতা, পুত্র-কন্যা, দাদা-দাদী, নাতী-নাত্নী, নানা-নানী পোতা-পুত্নী, এবং স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক ছাড়া সমস্ত আত্মীয় যদি তারা হকদার হয় তাদের কে জাকাত দেওয়া উত্তম।

কোন কোন কিতাবে পাওয়া যায় যদি এমন আত্মীয়কে বাদ দিয়ে অন্যকে জাকাত দেওয়া হয় তাহলে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top