হজ্ব কি? হজ্বের প্রকার ভেদ?হজ্ব আদায়ের সুন্নাত পদ্ধতি

Table of Contents

হজ্ব কি ও হজ্ব কাকে বলা হয়?

ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি হলো হজ্ব।হজ্ব কি? হজ্ব  শব্দের অর্থ হলো কোন মহৎ বস্তুর প্রতি গমনের এরাদা বা ইচ্ছা করা। শরীয়াতের পরিভাষায় এহরামের সহিত শরীয়াত নির্দেশিত পদ্ধতি ও সময়ে খানায়ে কা’বার তওয়াফ করা এবং মাকামে আরাফাতে অবস্থান করাকে হজ্ব বলা হয়। (মারাকিউল ফালাহ)

হজ্বের ফরজ হওয়ার সন সম্বন্ধে যদিও উলামায়ে কেরাম গণের মত ভিন্ন তাসত্ত্বেও সহীহ মত হল এই যে, সন ৯ হিজরীতে হজ্ব ফরজ হয়েছে।

কুরআন করীমে আল্লাহ পাক বলেন-

وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً অর্থাৎ আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে খানায়ে কা’বার হজ্ব করা ঐ ব্যক্তির জন্য ফরজ যার ঐ পর্যন্ত পৌঁছানোর ক্ষমতা আছে।

তিরমিজী শরীফের হাদীসে হজরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে হুজুর (সঃ) বলেন যে ব্যক্তির খানায়ে কা’বা পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য পাথেয় এবং সাওয়ারী (বাহক) ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও হজ্ব করল না, তার মৃত্যু বরণ আর ইহুদী, নাসরানীর মৃত্যু বরণের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য মানুষের উপর হজ্ব করা আবশ্যক।

অপর একটি হাদীসে হুজুর (সঃ) বলেন যার উপর হজ্ব ফরজ হল বাহ্যিক তার কোন প্রয়োজন, কোন অত্যাচারী বাদশা বা বাধা সৃষ্টিকারী কোন ব্যাধিতে সে আক্রান্ত না হওয়া সত্ত্বেও হজ্ব করল না, তাঁর ইচ্ছা সে ইহুদী হয়ে মরুক বা নাসরানী হয়ে মরুক। (দারিমী)

হজ্ব সম্পর্কিত কিছু শব্দের ব্যাখ্যা:-

মীকাত:- ঐ স্থান যেখান থেকে মক্কা প্রবেশ কারীর জন্য বিনা এহরামে প্রবেশ করা নিষিদ্ধ বহিরাগতের জন্য মীকাত পাঁচটি।

১। জুল হুলাইফা মদীনা বাসীদের জন্য

 ২। জাতে ইব্‌ক কুফা ও বাসরা বাসীদের জন্য

 ৩। জুহফা শাম (সিরিয়া) বাসীদের জন্য

 ৪। ইয়ালামলাম ভারতবাসীদের জন্য

 ৫। করণ নাজদবাসীদের জন্য আর যারা হিলবাসী তাদের মীকাত হিল এবং যারা হারমবাসী তাদের হজ্বের মীকাত হারম এবং উমরার জন্য হিল।

এহরাম:– হজ্ব অথবা উমরার নিয়াত করে তালবিয়া পাঠ করা।

উমরা:- এহরাম অবস্থায় খানায়ে কা’বার তওয়াফ এবং সাফা মারওয়ার সায়ী করা।

তওয়াফ:- খানায়ে কা’বার চারিপাশ প্রদক্ষিণ করা।

তালবিয়া :- অর্থাৎ নিরে হামদ পাঠ করা।

لبيكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ

وَالْمُلْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ

উচ্চারণ :- লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা লাব্বাইকা লা শরীকা লাকা লাব্বাইকা ইন্নাল হামদা অন্নি’মাতা লাকা অলমুলকা লা শরীকা লাকা।

অর্থ:- হে আল্লাহ-আমি আপনার দারবারে বার বার উপস্থিত হলাম এবং আপনার আহ্বানকে বারংবার গ্রহণ করলাম। আপনার কোন অংশিদার নেই। অবশ্যই সমস্ত প্রশংসা এবং দান উপদান আপনারই জন্য এবং রাজত্ব আপনারই আপনার কোন অংশিদার নেই।

উকুফ:- অর্থ অবস্থান করা, পারিভাষিক অর্থ- আরাফাত ও মুজদালেফায়

পৌঁছে যাওয়া।

রমী:- কিছু বিশেষ জায়গায় পাথর মারা বা পাথর নিক্ষেপ করা।

হাতীম :- ঐ স্থান যা হজরত ইবরাহীমের (আঃ) সময় কা’বার অন্তর্গত ছিল কুরাইশগণ অর্থ অভাবে তা যুক্ত করতে পারেননি।

হাজরে আসওয়াদ:- হাজর অর্থ পাথর আসওয়াদ অর্থ কালো। এখানে ঐ কালো রঙের পাথর যা খানায়ে কা’বার দ্বার নিকটস্থ পূর্ব কোনে ক্ষচিত আছে। এই পাথরটি জান্নাত হতে অবতীর্ণ হয়েছিল।

 যখন অবতীর্ণ হয় দুধের থেকে বেশী সাদা ছিল মানুষের গোনাহ তাকে কালো করে দিয়েছে। কেয়ামতের দিন এই পাথর ও উত্থিত হবে এবং যে তাকে চুম্বন দিয়েছে তার ঈমানদার হওয়ার সাক্ষ দেবে। (তিরমিজী-দারিমী)

মাকামে ইব্রাহীম :– একটা পাথর যার উপর দাঁড়িয়ে হজরত ইবরাহীম (আঃ) এবং তাঁর পুত্র হজরত ইসমাঈল (আঃ) কা’বা শরীফ নির্মান করেছিলেন।

জম জম :– একটা কুপ যেটাকে বিবি হাজেরা এবং তার স্নেহের পুত্র হজরত ইসমাঈল (আঃ) এঁর জন্য আল্লাহ তায়ালা প্রবাহিত করে ছিলেন।

রুকনে ইয়ামানী:- একটা পাথরের নাম যা খানায়ে কাবার ডান কোনে ক্ষচিত আছে।

হজ্বের প্রকার ভেদ হজ্ব চার প্রকারের হয় যথা:-

১। ফরজ :– হজ্বের শর্ত সমূহ পাওয়া গেলে জীবনে একবার হজ্ব করা ফরজ। শর্ত পাওয়া যাওয়া সত্ত্বেও না করলে কঠিন গোনাগার হবে। আর যদি কেউ তা অস্বীকার করে তাহলে কাফের হবে।

২। ওয়াজিব:– প্রথম ঐ ব্যক্তির উপর হজ্ব ওয়াজিব হয়, যে বিনা এহরামে মীকাত পেরিয়ে যায়। তার জন্য ওয়াজিব পুণরায় মীকাতে ফিরে এসে হজ্ব অথবা উমরার এহরাম বেঁধে প্রবেশ করবে। এবার সে যার এহরাম বাঁধবে সেটা তার উপর ওয়াজিব হয়ে যাবে। দ্বিতীয় ঐ ব্যক্তি যে হজ্বের মান্নত করে, তার উপর হজ্ব করা ওয়াজিব হয়।

৩। হারাম:– নাজায়েজ মাল দ্বারা হজ্ব করা হারাম।

৪। মাকরূহ তাহরিমী:- যাদের অনুমতি নেওয়া জরুরী তাদের বিনা অনুমতিতে হজ্ব করা মাকরূহ তাহরিমী। অনুরূপ যাদের ভরণ পোষণের দায়িত্ব তার উপর রয়েছে, তাদের ব্যবস্থা না করে হজ্ব করতে যাওয়া মাকরূহ তাহরিমী।

হজ্ব কি? হজ্বের প্রকার ভেদ?হজ্ব আদায়ের সুন্নাত পদ্ধতি

হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্ত সমূহ কি ?

১। মুসলমান হওয়া। কাফেরের উপর হজ্ব ফরজ নয়।

 

২। হজ্ব ফরজ হওয়া সম্বন্ধে অবগত হওয়া বা দারুল ইসলাম হওয়া।

 

৩। বালিগ হওয়া নাবালিগের উপর হজ্ব ফরজ নয়।

 

৪। আকিল (বুদ্ধিমান) হওয়া। পাগলের উপর হজ্ব ফরজ নয়।

 

৫। আজাদ হওয়া। (স্বধীন হওয়া)

 

৬। ইস্তেতায়াত অর্থাৎ ক্ষমতা থাকা। অর্থাৎ জরুরী প্রয়োজন ও ঋণ মুক্ত এবং যাদের দায় দায়িত্ব তার উপর আছে তাদের জন্য এতটা মাল ছেড়ে যাওয়া যা তার ফিরে আসা পর্যন্ত যথেষ্ট হয়ে যায়। যদি এতটা মাল থাকে যার দ্বারা হজ্ব পর্যন্ত পৌঁছানোর রাস্তা খরচ বা সাওয়ারী ইত্যাদি হয়ে যায়। তাকে ইস্তেতায়াত বা ক্ষমতা থাকা বলে।

 

৭। মক্কা পর্যন্ত পৌঁছানো এবং হজ্বের আরকান আদায় করার শারীরিক ক্ষমতা থাকা।

 

৮। হজ্বের সফরে বাধা সৃষ্টিকারী রোগ মুক্ত হওয়া।

 

৯। কোন অত্যাচারী বাদশার ভয় অথবা বন্দী না হওয়া।

 

১০। রাস্তা নিরাপদ হওয়া।

 

১১। স্ত্রী লোকেদের জন্য স্বামী অথবা মাহরাম সঙ্গী হওয়া।

 

১২। স্ত্রী লোকের ইদ্দতে না হওয়া।

 

হজ্ব সঠিক হওয়ার শর্ত:-

 

১। মুসলমান হওয়া।

 

২। হজ্বের আরকান সম্বদ্ধে অবগত হওয়া।

 

৩। হজ্বের মৌসমে বা সময়ে হজ্ব করা।

 

৪। যে স্থানে যে রুকন আদায় করতে হয় সেথায় সেটা করা।

 

৫। বুদ্ধিমান হওয়া।

 

৬। যে বছর এহরাম বেঁধেছে ঐ বছরেই হজ্ব করা।

হজ্ব আদায়ের সুন্নাত পদ্ধতি

 

যাকে আল্লাহ রব্বুল আলামীন এই নেয়ামতে উজমা ও তার অশেষ করুণার তৌফিক বা সুযোগ দান করেছেন। তিনি প্রথমে এস্তেখারা করে একটা তারিখ এই শুভ কাজের জন্য নির্ধারণ করবেন এবং নিজ মাতা পিতা, সাথী বন্ধু ও পাড়া প্রতিবেশীর কাছে থেকে অনুমতি নেবেন। যদি তাঁর উপর কোন হক, ঋণ ইত্যাদি থাকে তাহলে তা পরিশোধ করে দিয়ে সকলের নিকট হতে দোয়া ভিক্ষা নিয়ে মসজিদে গিয়ে দু রাকাত সফরের নামাজ আদায় করে কিছু সাদকা দিয়ে গন্তব্যস্থল মুখে পাড়ি দেবেন।

 

বাড়ী থেকে এমন দিন বার হওয়া উত্তম যেন মক্কা শরীফে সাত তারিখের পূর্বে পৌঁছতে পারেন। যাতে ৭ তারিখের খোৎবা শোনার সুযোগ পান। মীকাতে পৌঁছে এহরাম বাঁধবেন। এহরাম বাঁধার পর সমস্ত গোনাহ এবং ঐ সমস্ত কাজ হতে দুরে থাকবেন যা এহরামের আগেও নিষিদ্ধ ছিল।

 

তার পর ওঠাবসা, উচু স্থান আরোহন কালে, নীচে অবতরণ কালে, একে অপরের সাক্ষাতে, কোন আরোহী দেখলে উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করবেন।

 

তওয়াফের সময় উচ্চস্বরে পাঠ করবে না। তার পর মক্কা শরীফ কাছে এলে গোছল করবেন এবং দিনের মধ্যে যখন হোক বাবুল মুয়াল্লা দিয়ে প্রবেশ করে বাইতুল্লাহ শরীফের জিয়ারত করবেন। হারম শরীফে বাবুসসালাম দিয়ে পৌঁছবেন। ঐ সময় নিজের মধ্যে আনুগত্য নম্রতা ও অক্ষমতা প্রকাশ করবেন। আল্লাহ না করুক যদি দুর্ভাগ্য বশত কারো মধ্যে ঐ সমস্ত অবস্থা প্রকাশ না পায় তাহলে ঐ সমস্ত অবস্থার ভাব প্রকাশের ভান করবেন। 

উক্ত পবিত্র ও পূণ্যময় স্থানের মহাত্ত্ব অন্তরে রেখে সর্বদা তালবিয়া তাহলীল এবং নবী (সঃ) এর প্রতি দরুদ শরীফ পড়বেন। যদি ঐ সময় কেউ তাঁর সহিত কোন বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক, জগড়া-ফাসাদ করে তার সহিত খুবই নম্রতার সহিত ব্যবহার করবেন। যখনই খানায়ে কা’বার প্রতি নজর পড়বে সঙ্গে সঙ্গে মনে যা উদয় হবে আল্লাহ পাকের নিকট প্রার্থনা করবেন। তাসবীহ তাহলীল দোওয়া দরুদ পড়তে পড়তে যখন হাজরে আসওয়াদের সোজা আসবেন তাকে চুম্বন দেবেন।

 

আফাকী (বহিরাগত) ব্যক্তি তওয়াফে কুদুম করবেন। নিজের ডান দিক দিয়ে হাতিম সহ খানা কাবার দরজা হতে শুরু করে সাত বার তওয়াফ করবেন। প্রত্যেক বার যখন হাজরে আসওয়াদের সমানে আসবেন চুম্বন দিবেন। প্রথম তিন বারে “রমল” (তওয়াফের সময় বুক ফুলিয়ে চলা) করবেন এবং প্রত্যেক বার রুকনে ইয়ামানীরও ইস্তেলাম (চুম্বন দেওয়া) করবেন।

 তারপর মাকামে ইব্রাহীমে এসে ওয়াজিব নিয়াত করে দুরাকাত নামাজ পড়বেন। যদি সেখানে সুযোগ না পাওয়া যায় তাহলে খানায়ে কাবার যেখানে সুযোগ হয় সেখানেই পড়ে মুলতাজামে এসে জমজমের পানি পান করবেন এবং হাজরে আসওয়াদের চুম্বন দিবেন ও সায়ী করবেন। সায়ী করতে যখন সাফা পাহাড়ে উঠবেন সেখান থেকে কাবা শরীফের দিকে মুখ করে হাত উঠিয়ে দোয়া করবেন এবং তালবিয়া, তাহলীল,

 

(লাইলাহা ইল্লাল্লাহু পড়া) তাকবীর ও দরুদ শরীফ পাঠ করবেন। মারওয়া পাহাড়ে উঠে অনুরূপ পাঠ করে কাবা শরীফের দিকে মুখ করে হাত তুলে দোয়া করবেন। সাফা পাহাড় থেকে সায়ী করবেন। উত্তম পন্থা হল এটাই যে এর পর এহরাম অবস্থাতেই মক্কা শরীফে অবস্থান করবেন এবং রমল ও সায়ী বিহিন তওয়াফ করতে থাকবেন। তওয়াফের কোন সময় নির্দিষ্ট নেই।

 

সাত তারিখে ইমাম সাহেব কা’বা শরীফে জোহরের নামাজ বাদ খুৎবা দিবেন, যাতে হজ্বের মাসায়েল বর্ণনা করবেন। তার পর আট তারিখ সকালে ফজরের নামাজ মক্কা শরীফে পড়ে মিনা রওয়ানা হওয়ার প্রস্তুতি নিবেন। মিনায় এমন সময় পৌঁছতে হবে যেন সেখানে গিয়ে জোহরের নামাজ পড়া সম্ভব হয় এবং মসজিদে খীফের কাছাকাছি কোন স্থানে অবস্থান করবেন।

 

নয় তারিখে মিনাতে আউয়াল ওয়াক্তে ফজরের নামাজ পড়ে নিয়ে যখন সূৰ্য্য উদয় হবে আরাফাতের ময়দানে পৌঁছে জোহরের নামাজ মসজিদে নামিরাতে পড়বেন। ইমাম সাহেব নয় তারিখের জোহরের নামাজে জুময়ার ন্যায় দুটি খুৎবা দিবেন। দুই খুৎবার মাঝে হালকা জালসাও করবেন। 

জুময়ার ন্যায় ইমাম মিম্বারে বসলে তার সম্মুখে আজান দেওয়া হবে। উক্ত খুৎবাতে হজ্বের মাসয়ালা বর্ণনা করবেন, খুৎবা শেষ হলে ইমাম সাহেব জোহরের এবং আসরের নামাজ একই ওয়াক্তে পড়বেন। উক্ত দুই নামাজের জন্য আজান একবার হবে কিন্তু দুই ফরজ নামাজের জন্য তাকবীর আলাদা আলাদা হবে। দুই ফরজ নামাজের মাঝে কোন নফল নামাজ পড়বেন না। এই দুই নামাজ একত্রিত পড়ার সুযোগ কেবল তাদেরই যারা এহরাম হালতে ইমামের পিছনে নামাজ পড়বেন। নামাজ পড়ার পর নিজ অবস্থান স্থলে চলে যাবেন। মাকামে আরাফাতে “বাৎনে উরনা” ছাড়া যে কোন জায়গায় অবস্থান করতে পারেন। জোয়ালের পর গোসল করে জাবালে রহমাতের পাশে দাঁড়িয়ে কেবলা মুখি হয়ে তালবিয়া, তাকবীর, তাহলীল করবেন তার পর হাত পেতে আল্লাহর কাছে খুব বিনয়ের সহিত কেঁদে কেঁদে নিজের এবং প্রতিবেশী ও বিশ্ব বাসীর জন্য দোওয়া করবেন।

 

সাওয়ারীর উপর উকুফ (অবস্থান) করা উত্তম। তা নাহলে বসে থাকা হতে দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম। তার পর ইমাম হজ্বের মাসয়ালা বিশিষ্ট একটি খুৎবা পাঠ করবেন। এই খুৎবা জোহরের পরে পাঠ করবেন।

 তার পর যখন সুৰ্য্য অস্ত যাবে তখন ইমাম জনগণ সহ আস্তে আস্তে আরাফাত ছেড়ে মুজদালিফার দিকে অগ্রসর হবেন। সেখানে পৌঁছে রাস্তা বাদ রেখে জাবালে কুজাহ এর কাছে অবতরণ করে সেখানে মাগরিব এবং এশার নামাজ একত্রে আদায় করবেন। এখানে আজান ও একামত একটাই হবে এবং দুই ফরজের মাঝে কোন নফল নামাজ পড়বে না। যদি কেউ রাস্তায় মাগরিব পড়ে নেয় তাহলে তা সহীহ হবে না। বরং সূর্য উদয়ের আগে আগে উক্ত নামাজ দুহরিয়ে নেবে।

দশ তারিখের রাতে মুজদালিফায় অবস্থান করবেন “বানে মুহাস্সার” ছাড়া পূর্ণ মুজদালিফার যেথা ইচ্ছা অবস্থান করতে পারেন। সেখানে আউয়াল ওয়াক্তে ফজর পড়ে খুব বিনয়ী ও নম্রতার সহিত আল্লাহর কাছে নিজের দ্বিনী দুনিয়াবী প্রয়োজনের দোওয়া করবেন। তার পর সূর্য্য উদয় হওয়ার আগে এবং খুব পরিমান আলোকিত হওয়ার পর সেখান থেকে ইমাম সাহেবের সাথে মিনার দিকে রওয়ানা হয়ে সেখানে অবস্থান করবেন এবং জামরাতুল উকবায় সাতটি পাথর রমী করবেন। 

এই কাকর গুলি হয় মুজদালিফা হতে অথবা রাস্তা হতে সঙ্গে নিতে হবে। ঐ খান থেকে কুড়াবেন না। রমী শুরু হতেই তালবিয়া বন্ধ করে দেবেন। তার পর কুরবানী করে মাথা মুণ্ডন করে নেবেন বা চুলের কিছু অংশ কেটে ফেলবেন। পুরুষদের জন্য মুণ্ডন উত্তম। নারীদের মুণ্ডন করা নিষেধ। এখানে থেকে এহরামে সমস্ত নিষিদ্ধ কাজ “রফাছ” (সহবাস বা ঐ প্রসঙ্গে আলোচনা) সব হালাল হয়ে যাবে। 

তার পর মিনায় ঈদের নামাজ পড়ে ঐ দিনই মক্কা চলে যাবেন এবং “তওয়াফে জিয়ারত” করবেন। এই তওয়াফে সায়ী এবং রমাল হবেনা। যদি পূর্বের তওয়াফে সায়ী রমাল না করে থাকেন তাহলে সায়ী রমাল করবেন। তার পর মিনা ফিরে গিয়ে সেখানে অবস্থান করবেন। তওয়াফে জিয়ারতের পর রফাছ ও জায়েজ হয়ে যায়।

 

এগারো তারিখে জাওয়ালের পর পায়ে, হেঁটে তিন উকবার রামী করবেন। মসজিদে খায়েফের নিকটবর্তি উকবার রামী করবেন। সাতটি কাঁকর নিক্ষেপ করবেন। প্রত্যেক বার তাকবীর বলবেন। সেখানেই অবস্থান করে হামদ ও সালাতের পর প্রয়োজনের জন্য দোওয়া করবেন। নিজমাতা পিতা তথা সমস্ত মুসলিম জগতের জন্য দুআয়ে মাগফিরাত করবেন। তার পর পরবর্তি উকবার রমী করে সেখানে দাঁড়িয়ে পূর্বের ন্যায় দোওয়া করবেন। তার পর ছাওয়ার হয়ে জামরায়ে উকবার রামী করবেন কিন্তু সেখানে অবস্থান করবেন না বরং সারা রাত মিনায় অবস্থান করবেন।

 

বারো তারিখে পূর্বের ন্যায় তিনটি জামরার রামী করবেন এবং ঐ দিনই সূর্য্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে মক্কা ফিরে যাবেন। রাস্তায় মুহাসসাবে কিছুক্ষণ অবতরণ করবেন। তার পর মক্কা থেকে সফর শুরু করার সময় তওয়াফে বিদা করবেন এই তওয়াফে সায়ী রমাল হবে না। তার পর তওয়াফের দু রাকাত নামাজ আদায় করে জমজমের পবিত্র পানি পান করবেন। পানি ঢোকে ঢোকে পান করবেন এবং প্রত্যেক বার খানায়ে কাবার দিকে অনুতপ্ত ও বিষাদ ভরা নয়ন বারংবার নিক্ষেপ করবেন। 

তার পর মুলতাজামে গিয়ে নিজের মুখ ও বুক লাগিয়ে খানায়ে কা’বার পর্দা ধরে কাতরতার সহিত বিচ্ছেদ ব্যাথা প্রকাশ করে কেঁদে কেঁদে দোওয়া করবেন। যদি এরকম অবস্থা না তৈরী হয় তাহলে ঐ মুবারক স্থান ত্যাগের কথা স্মরণ করে ইচ্ছাকৃত নিজের উপর ঐ অবস্থা তৈরী করবেন তার পর খানায় কা’বার দিকেই মুখ রেখে পিছনে হেঁটে হেঁটে ফিরে আসবেন। কা’বা শরীফের দিকে পিঠ করবেন না।

 

নারীদের হজ্ব করার নিয়মও ঐ একই। পার্থক্য এত টুকু যে নারীরা তালবিয়া উচ্চ স্বরে পড়বেন না এবং মীলাই আখজারইনের মাঝে সায়ী করবেন না। ভীড়ের সময় হাজরে আসওয়াদের ইস্তেলাম করবেন না। রামী করার পর মাথা মুণ্ডন না করে এক আঙুল সমান চুল কেটে ফেলবেন।

হজ্ব তিন প্রকারের হয়

১। ইফরাদ:- কেবল হজ্বের এহরাম বেঁধে হজ্ব সম্পন্ন করা। যে ব্যক্তি ইফরাদ হজ্ব করেন তাকে মুফরিদ বলা হয়।

 

২। কেরান:- হজ্ব এবং উমরা উভয়ের এক সাথে এহরাম বাঁধা। প্রথমে উমরা করে তার পর হজ্ব করা। যে ব্যক্তি কেরান করেন তাকে কারিন বলা হয়।

 

৩। তামাত্ত্বঃ- হজের মৌসমে প্রথমে উমরার এহরাম বেঁধে উমরা করা তার পর ঐ সফরেই হজ্বের এহরাম বেঁধে হজ্ব করা। যে ব্যক্তি তামাকু করেন তাকে মুতামাত্তি বলা হয়।

 

মাসয়ালা :- পূর্বে বর্ণিত হজ্বের নিয়ম, হজ্বে ইফরাদের নিয়ম। যদি কেউ কেরান করতে চান তাহলে তিনি ও সমস্ত কাজ পূর্বের ন্যায় করবেন।পার্থক্য কেবল এতটুকু যে তিনি মক্কায় প্রবেশ করে প্রথমে উমরার তওয়াফ করবেন তার পর তওয়াফে কুদুম করবেন। উমরার তওয়াফ ও তওয়াফে কুদুম উভয় একই রকম। 

কেরান হজুকারী দশ তারিখ জামরাতুল উকবার রামী করার পর অবশ্যই কুরবানী করবেন। যদি কুরবানী করার ক্ষমতা না থাকে তাহলে দশটা রোজা রাখবেন। তিনটি রোজা দশ তারিখের পূর্বে এবং আইয়ামে তাশরীকের পর সাতটা রোজা রাখবেন।

 

মাসয়ালা :- যিনি হজ্বে তামাকু করতে চান তিনি মীকাত থেকে কেবল

 

উমরার এহরাম বেধে মক্কায় যাবেন এবং উমরার তওয়াফ করে ঐ সময়ই তালবিয়া বন্ধ করে দেবেন। তওয়াফের পর তওয়াফের নামাজ পড়ে সায়ী করবে তার পর হালক অথবা তাকসীর করবেন। তার পর তার ইচ্ছা এহরাম ভঙ্গও করে দিতে পারেন রাখতে ও পারেন। যদি ভঙ্গ করে দেন তাহলে পুনরায় মীকাত থেকে এহরাম বেঁধে আসতে হবে। আর যদি না ভঙ্গ করেন বরং মক্কাতেই থাকেন তাহলে তার মীকাত হবে হারম। ওখান থেকে এহরাম বাঁধবেন। উত্তম পদ্ধতি হল এই যে, আট তারিখে হজ্বের এহরাম বাঁধা তার পর মুফরিদের মত সমস্ত কাজ করতে থাকবেন। কারিন ব্যক্তির ন্যায় মুতামাত্তির প্রতি ও কুরবানী করা আবশ্যক অক্ষম হলে কারিনের ন্যায় রোজা রাখবে।

 

মাসয়ালা :- মুতামাত্তি যদি সঙ্গে হাদী নিয়ে যান তাহলে উমরার তওয়াফ সেরে কুরবানী করবেন তার পর হজ্বের এহরাম বাঁধবেন। নিয়ম অনুযায়ী হজ্ব করে তার পর দশ তারিখে মাথা মুণ্ডন করে হজ্ব ও উমরা উভয় এহরাম হতে বার হয়ে যাবেন। এর পূর্বে উমরার এহরাম হতে বার হতে পারবেন না।

 

মাসয়ালা :- এহরাম বাঁধা, উকুফে আরাফা, তওয়াফে জিয়ারত কমপক্ষে চার চক্র, উক্ত ফরজ গুলি পরপর হওয়াও প্রত্যেক রুক্স শরীয়ত নির্দেশিত সময় ও স্থানে হওয়া ফরজ। বর্ণিত কাজের মধ্যে কোন একটি ছেড়ে গেলে হজ্ব হয় না।

 

মাসয়ালা :- হজ্বের ওয়াজিব বিভিন্ন বর্ণনা করা হয়েছে কেউ কেউ পঁয়ত্রিশটা বলেছেন কিন্তু প্রকৃত পক্ষে ঐ গুলো কোন না কোন রুকনের ওয়াজিব তার মধ্যে আসল ছয়টি। উকুফে মুজদালিফা, সায়ীকরা, রামী করা, ও কারিন এবং মুতামত্তির জন্য কুরবানী করা ওয়াজিব।

 

মাসয়ালা :- মীকাত হতে বিনা এহরামে যে কোন উদ্দেশ্যে অগ্রসর হওয়া মাকরূহ তাহরিমী। যদিও তা ব্যবসা বা ভ্রমনের উদ্দেশ্যে হয়।

 

মাসয়ালা:- মীকাত হতে এহরাম বাঁধা ওয়াজিব যদি তারও আগে এহরাম বাঁধা হয় জায়েজ আছে তবে যেন এহরামের আদব রক্ষা করা হয়।

 

মাসয়ালা :- হজ্ব অথবা উমরা যে জন্য এহরাম বাঁধা হবে তা পুরণ না করে এহরাম হতে বার হয়ে যাওয়া জায়েজ নয়। যদি তা ফাসিদ হয়ে যায় তাও পুরণ করতে হবে। কিন্তু হজ্বের এহরাম বাঁধার পর ফাসিদ হয়ে গেলে যদি হজ্বের দিন পেরিয়ে যায় তাহলে উমরা করে এহরাম হতে বার হতে হবে। যদি হজ্ব আদায় করতে বাধিত হয় তাহলে হাদি জবাহ করে বার হবে। কিন্তু নামাজের বেলা তা নয়, নামাজ ফাসিদ হলে তা পূর্ণ করা জায়েজ নয়।

 

মাসয়ালা :- এহরাম বাঁধার পূর্বে গোসল করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। যদি গোসল সম্ভব না হয় তাহলে ওজু করে নেওয়া যথেষ্ট হবে।

 

মাসয়ালা :- হায়েজ নেফাস বিশিষ্ট নারী এবং নাবালিগ বাচ্চাদের জন্যও গোসল করা সুন্নাত। গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করা বৈধ নয়। কারণ এই গোসল পবিত্রতার জন্য নয় বরং পরিচ্ছন্নতার জন্য।

 

মাসয়ালা :- গোসল করার আগে নোখ কেটে নেওয়া, মাথা মুণ্ডন করা এবং গোসলের পর সাদা চাদর ও সাদা লুঙ্গি পরিধান করা এবং কিছু সুগন্ধি লাগানো মুস্তাহাব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top