কিয়ামত পর্যন্ত শাস্তি ভোগ করতে থাকবে।
বেনামাজীর ভয়াবহ অবস্থা রসুলুল্লাহ (সঃ) মি’রাজ শরীফে গিয়ে একদল লোককে দেখতে পেলেন যে, ফেরেস্তাগণ পাথরের আঘাতে তাদের মাথা চূর্ণ বিচূর্ণ করছে, সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় পূর্বের ন্যায় ঠিক হয়ে যাচ্ছে এবং পুনরায় তাদের মাথা চূর্ণ করা হচ্ছে। হজরত রসুলুল্লাহ (সঃ) জিবরাঈল ফেরেস্তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ওরা কোন সম্প্রদায়ের লোক এবং কি অপরাধে ওদের এই রূপ শাস্তি দেওয়া হচ্ছে?
জিবরাঈল (আঃ) উত্তর দিলেন- ইয়া রসুলুল্লাহ (সঃ) আপনার উম্মতের মধ্যে যারা নামাজের সময় নিদ্রায় অতিবাহিত করত এবং অলসতা বশতঃ নামাজের সময় শয্যাতাগ করত না, তারাই এ শাস্তি ভোগ করছে। ওরা সকলেই আল্লাহর নাফরমান বেনামাজীর ভয়াবহ অবস্থা। কিয়ামত পর্যন্ত ওরা এইরূপ শাস্তি ভোগ করতে থাকবে।
বেনামাজীর ভয়াবহ অবস্থা , বেনামাজী জামায়াত পরিত্যাগ কারীদের জন্য তৌরাত, ইন্জিল, জবুর ও কুরআন শরীফে লা’নাত দেওয়া হয়েছে এবং বেনামাজী যে জমিনের উপর চলাফেরা করে, ঐ জমিন তার জন্য লা’নাত করে। আল্লাহ তায়ালা ও ফেরেস্তা এবং প্রত্যেক প্রাণী বে নামাজীর উপর অসন্তুষ্ট থাকে। জমিন ও আসমানের ফেরেস্তা তার উপর লা’নত করে। বেনামাজীর ভয়াবহ অবস্থা, বে নামাজী কখনও জান্নাতের খোশবু পাবে না।
হাদিস পাকে এসেছে র্যা “গাই” জাহান্নামের একটা বড় দুর্গন্ধ যুক্ত I الْغَيُّ قَعْرٌ فِي جَهَنَّمَ । যদি তার এক ফোটা দুনিয়ায় পড়ে, তাহলে দুনিয়া শেষ হয়ে যাবে। হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন । “গাই” জাহান্নামের একটি কুপ বা নালা – قَالَ ابْنُ عَبَّاسِ الْغَيُّ وَادٍ فِي جَهَنَّمَ
জাহান্নামের সমস্ত নালা তার কঠিন উত্তপ্ত থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর নিকট প্রত্যেকদিন এক হাজার বার আশ্রয় প্রার্থনা করে। আর এই নালাটা বেনামাজী ও জমায়াত ত্যাগ কারীদের জন্য।
বেনামাজীর ভয়াবহ অবস্থা নিয়ে হজরত আতা (রাঃ) বলেন- র্যাঁ গাই জাহান্নামের একটি গর্ত কূপ, যাতে রক্ত এবং পুঁজ ভর্তি রয়েছে-
في قَالَ عَطَاءُ الغَيُّ وَادٍ فِي جَهَنَّمَ تَسِيلُ فِيْهِ دَمٌ وَقَيْحٌ ও জামায়াত ত্যাগকারী বসবাস করবে। কি ভয়াবহ অবস্থা! আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে নামাজী বানিয়ে দিন এবং ঐ ভয়াবহ জাহান্নাম থেকে বাঁচান।
একটি ঘটনা – একদিন নবী (সঃ) সাহাবীদের সঙ্গে বসে আছেন। এমন সময় আরবের এক জোয়ান যুবক ব্যক্তি কাঁদতে কাঁদতে মসজিদে নবাবীর দিকে এগিয়ে আসলেন। নবীপাক (সঃ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, فَقَالَ مَا يَبْكِيْكَ يَا شَابُ হে যুবক! তুমি ক্রন্দন করছো কেন? উত্তরে যুবকটি বলল, হুজুর আমার বাপ মারা গেছে কিন্তু তার গোসল, কাফন দেওয়ার মত কোন লোক হচ্ছে না।
বেনামাজীর ভয়াবহ অবস্থা, নবী পাক (সঃ) হজরত আবু বকর ও হজরত ওমর (রঃ) কে যাওয়ার জন্য হুকুম করলেন, তাঁরা দুজনে এসে দেখলেন فَرَا مِثْلَ الْخِنْزِيرِ الْأَسْوَدِ কালো শুকরের ন্যায়, তাঁরা দুজনে এই দেখে নবী পার্ক (সঃ) এঁর কাছে ফিরে এসে সব ঘটনা বর্ণনা করলেন। নবী পাক (সঃ) বৃত্তান্ত শুনে স্বয়ং তিনি আসলেন এবং দোওয়া করে দিলেন।
فَدَعَا فَصَارَ الْمَيْتُ عَلَى صُورَتِهِ الأولى পরিবর্তন হয়ে গেল। তারপর তাঁর গোসল কাফন ও জানাযা নামাজ সামাধা করা হল, তারপর যখন দাফন করা হল তখন দেখা গেল সে আগের মত কালো শুকরের সুরাতে পরিবর্তন হয়েছে। নবী পাক (সঃ) ঐ যুবককে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার বাপ দুনিয়ার কি কার্য্য করেছিল? সে বলেছিল
فَقَالَ كان تارك الصلوة (সঃ) বললেন-
فَقَالَ يَا أَصْحَابِي انْظُرُوا حَالَ مَنْ تَرَكَ الصَّلوةَ يَبْعَثُهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
مِثْلَ الْخِنْزِيرِ الأَسْوَدِ نَعُوذُ بِا اللهِ تَعَالَى مِنْهَا – بهجة الانوار)
ওহে আমার সাহবীরা, বে নামাজীর অবস্থা দেখে নাও কিয়ামতের দিন তাকে কালো শুকরের সুরাতে উঠানো হবে, নাউজু বিল্লাহ।বেনামাজীর ভয়াবহ অবস্থা অন্য একটি রেওয়ায়েতে আছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّهُ قَالَ مَاتَ رَجُلٌ مِنْ زَمَنِ النَّبِيِّ ﷺ فَقَامَ عَلَى جنازته لِيُصَلِّى عَلَيْهِ فَتَحْرَكَ الكَفْنُ وَنظَرَهُ النَّبِيُّ ﷺ فَوَجَدَ فِيهِ حَيَّةٌ تَأْكُلُ لَحْمَةً فَقَصَدَ أَبُو بَكْرٍ أَن يَضْرِبَهَا فَنَطَقَتِ الْحَيَّةُ بِإِذْنِ اللَّهِ تَعَالَى فَقَالَتْ بِلِسَانٍ فَصِيحِ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَ رَسُولُهُ وَقَالَتْ يَا أَبَابَكُرٍ لِمَ تَضْرِبُنِي وَلَيْسَ لِي ذَنْبٌ وَأَنَا مَأْمُورَةٌ بِذَلِكَ أَمَرَنِي اللهُ تَعَالَى أَنْ أُعَذِّبَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ مَا خَطَايَاهُ فَقَالَتِ الْحَيَّةُ لَهُ ثَلَاثَ خَطِئَاتِ الْأُولَى تَارِكُ الصَّلُوةِ وَالثَّانِي مَانِعُ الزَّكوةِ وَالثَّالِثَةُ لَا يَسْمَعُ قَوْلَ الْعُلَمَاءِ (حيات القلوب)
হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (সঃ) এঁর জামানাতে এক ব্যক্তি ইন্তেকাল করেন। যখন নবী (সঃ) জানাযা নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে যান তখন কাফনের কাপড় নড়তে থাকে এবং তাতে নবী পাক (সঃ) এঁর নজর পড়ে গেল, তারপর দেখা গেল তার ভিতর একটি সর্প তার গোস্ত খাচ্ছে, হজরত আবু বকর (রাঃ) ঐ সর্পটিকে মারার জন্য উদ্যত হলেন, তখন সর্পটি আল্লাহর হুকুমে কথা বলল এবং স্পষ্ট ভাবে বলল-
أَشْهَدُ أن لا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدَهُ وَرَسُولُهُ
অর্থাৎ :- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি হজরত মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর বান্দা এবং প্রেরিত রসুল।
তার পর সর্পটি হজরত আবু বকর (রাঃ) কে বলল, আপনি আমাকে কেন মারছেন, আমার তো কোন অন্যায় নেই, আমি এই কাজের জন্য আদিষ্ট, আমাকে আল্লাহ তায়ালা এর শাস্তি দেওয়ার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত হুকুম করেছেন। তারপর হজরত আবু বকর (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, এই লোকটির গোনাহ কি? সর্পটি উত্তরে বলল, এর তিনটি গোনাহ (১) নামাজ পরিত্যাগ করত (২) জাকাত প্রদান করত না (৩) উলামায়ে হাক্কানীদের কথা শুনত না।
বেনামাজীর ভয়াবহ অবস্থা বর্ণনা
নামাজ পরিত্যাগ কারীদের কি ভীষণ কঠিন ভয়াবহ দুরাবস্থা যা বর্ণনা করে শেষ করা যায় না, আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে নামাজী মুছাল্লি হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।
পাঁচটি কঠিন মসিবত থেকে উদ্ধারের উপায় হল নামাজ
দুনিয়ার জিন্দেগী শেষ হওয়ার পর মানুষের উপর পাঁচটি মসিবত আগমন করে।
(১) মৃ-ত্যু
(২) ক-ব-র
(৩) হা-শ-র
(৪) পূলসেরাত
(৫) বেহেশতের দরওয়াজা বন্ধ হওয়া।
আল্লাহ তায়ালা উক্ত পাঁচটি বিপদ হতে উদ্ধার করার জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। বর্ণিত পাঁচটি বিপদ অত্যান্ত কঠিন, কারণ ধনবল জনবলের সাহায্যে উক্ত মসিবত গুলি হতে কেউ পরিত্রাণ পাবে না। উক্ত মসিবত গুলির সংক্ষিপ্ত আলোচনা রাখছি, যাতে আমরা বুঝতে পারি।
* মৃ-ত্যু-র কষ্ট :-
হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, হজরত রসুলুল্লাহ (সঃ) এঁর ইনতেকালের পূর্ব মুহুর্তে আজরাইল (আঃ) হজরতের জান কবজ করার অনুমতি চাইলেন, নবী পাক (সঃ) যখন অনুমতি দিলেন, তখন আজরাইল (আঃ) তাঁর ডান হাত খানা নবী পাকের সীনার উপরে রাখলেন, তখন নবী পাক (সঃ) বললেন হে ভাই আজরাইল, আমার এত কষ্ট অনুভব হচ্ছে, মনে হচ্ছে যেন আমার বুকের উপর একটি পাহাড় চাপিয়ে দওেয়া হয়েছে। তুমি আমার দূর্বল উন্মতদিগকে এই রূপ কষ্ট দিয়ে জান কবজ করবে না কি? তদুত্তরে আজরাইল (আঃ) বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ। (সঃ) সর্বাপেক্ষা অধিক
আছানীর সহিত আপনার জান কবজ করছি। আমার জীবনে আমি এত সহজে কারো জান কবজ করিনি।
হজরত ঈসা (আঃ) আপন মা হজরত মরিয়াম (আঃ) এঁর ইনতিকালের পর মাকে জিজ্ঞাসা করছেন-
قَالَ يَا أَمَّاهَ كَيْفَ وَجَدَتِ الْمَوْتَ قَالَتْ وَ الَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ نَبِيًّا مَا
ذَهَبَ مُرَارَةُ الْمَوْتِ مِنْ حَلَقِى
অর্থ- হে আম্মাজান! আপনি মৃত্যুকে কেমন পেলেন? আম্মাজান উত্তরে বললেন, ঐ আল্লাহ পাকের কসম খেয়ে বলছি, যিনি তোমাকে সত্য নবী করেছেন, এখনও পর্যন্ত আমার গলদেশ থেকে মৃত্যুর কষ্টের তিক্ততা দূরভীত হয় নি।
* কবর:-
হাদিস শরীফে আছে নবী পাক (সঃ) বলেছেন-
قَالَ النَّبِيُّ الْقَبُرُ أَوَّلُ مَنْزِلَ مِنْ مَنَازِلِ الْآخِرَةِ وَ آخِرُ مَنْزِلَ مِنْ مَنَازِلِ الدُّنْيَا فَمَنْ نَجَامِنَهُ فَمَا بَعْدَهُ أَيْسَرُ وَإِنْ لَمْ يَنْجُ فَمَا بَعْدَهُ أَشَدُّ
অর্থ- নবী পাক (সঃ) এরশাদ করেন, কবর আখেরাতের ঘাটি সমূহের মধ্যে প্রথম ঘাটি এবং দুনিয়ার ঘাটি সমূহের মধ্যে শেষ ঘাটি, যে ব্যক্তি কবর থেকে পরিত্রাণ পেল, সে তার পরের সমস্ত ঘাটি থেকে পরিত্রাণ পেয়ে গেল, আর যদি কবর থেকে নাজাত না পায়, তার পরের সমস্ত ঘাটি তার জন্য কঠিন হয়ে গেল। সে জন্য হজরত উসমান গনী (রাঃ) যখন কবরের ধারে যেতেন, তখন এত কাঁদতেন যে, তাঁর সমস্ত দাড়ি মোবারক চোখের পানিতে ভিজে যেত।
হজরত ফতেমা (রাঃ) এঁর শানে কবর থেকে আওয়াজ এসেছিল-
مَا أَنَا مَوْضَعُ حَسَبٍ وَ نَسَبٍ وَإِنَّمَا أَنَا مَوْضَعُ الْعَمَلِ الصَّالِحِ
অর্থ “এখানে কোন বংশ গৌরব ও নামের স্থান নেই বরং এটা সৎ আমলের জায়গা” নেক আমল ও সৎ কাজ ছাড়া কেউ কবর থেকে পরিত্রান পাবে না।
* হাশর:-
হাশরের ময়দান অর্থাৎ কিয়ামতের দিন এত কঠিন দিন, যা বর্ণনা করা অসম্ভব, হজুর (সঃ) এরশাদ কে
من البرية تخبر النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كَمَا وَلَدَتْهُمْ أُمَّهَاتُهُمْ حَفَاةٌ مرة فقالت عائلة الرجل وَ النِّسَاهُ ؟ قَالَ نَعَمْ قَالَتْ وَا أَسْفَادِ يَنظُرُ علي حدا رب إلى يَدَهُ عَلَى مَنكَبَيْهَا وَقَالَ يَا ابْنَةَ أَبِي الحلاقة يدخل الناس توكيد مِنَ النَّظَرِ وَ شَخِصَتْ أَبْصَارُهُمْ إِلَى اشتم و قالون أزمين سنة لا يَأْكُلُونَ وَلَا يَشْرَبُونَ مِنْهُمْ مَنْ يَبْلُغُ العراق إلى قديهِ وَمِنْهُم مَن يَبْلُغُ إِلَى سَاقَيْهِ وَ مِنْهُمْ مَنْ يَبْلُغُ إِلَى صدر هو العريق يكون من طول الوقوف الخ- (دقائق الاخبار)
হজরত রসুলুল্লাহ (সঃ) এরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন কবর থেকে মানুষ উলঙ্গ অবস্থায় উঠবে, যেমন মায়ের পেট থেকে বস্ত্রহীন উলঙ্গ অবস্থায় জন্ম গ্রহন করে। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) বলেন, পুরুষ এবং নারী কি? নবী পাক (সঃ) বলেন হ্যাঁ।
হজরত আয়েশা (রাঃ) আপসোস ও দুঃখ করে বললেন, একজন অপরজন কে উলঙ্গ অবস্থায় দেখবে? অখন হুজুর (সঃ) হজরত আয়েশা (রাঃ) এর কাঁধের উপর হাত রেখে বললেন ঐদিন কেউ কারো দিকে লক্ষ্য করবে না বরং চল্লিশ বৎসর পর্যন্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবে। কেউ কিছু খাবে না এবং পানও করবে না। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার জন্য কেউ পা পর্যন্ত ঘামে ডুবে থাকবে, কেউ হাঁটু
পর্যন্ত, কেউ বক্ষ্যস্থল পর্যন্ত ঘামে ডুবে থাকবে। ঐ দিন কঠিন দুর্দিন, সূর্য্য একেবারে মাথার নিকটে আসবে, কোন ছায়া থাকবে না একমাত্র আল্লাহ তায়ালার রহমতের ছায়া ছাড়া
يَوْمَ لَا ظِلُّ إِلَّا ظَلَى ঐ ভয়াবহ দিনে আল্লাহ পাক যার ডান হাতে আমন
নামা দান করবেন, তার হিসাব নিকাশ অতি সহজ হবে এবং আল্লাহ পাকের রহমতের হকদার হবে, সেও খুব খুশী ও আনন্দীত হবে যেমন আল্লাহ পাক কালাম পাকে বলেছেন-
فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَاباً يُسِيراً وَيَنْقَلِبُ
إلى أَهْلِهِ مَسْرُوراً
* পুল ছেরাত:-
একটি রাস্তা যা চুলের থেকে সরু এবং হীরের থেকে
ধারালো, রাস্তার পরিমান ৩০ হাজার বৎসর। যে রাস্তা জাহান্নামের উপর অবস্থিত। আর এই রাস্তা অতিক্রম করেই জান্নাতে পৌঁছাতে হয়। এই কঠিন পুলছেরাতের নাম শুনেই আল্লাহ ওয়ালা মানুষেরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন- যেমন হজরত খলিফা ওমর ইবেন আব্দুল আজিজ (রঃ)। তিনি খলিফা ছিলেন আবার খোদাভীরু মুত্তাকী ছিলেন।
একদিন তাঁর দাসী বলল, হুজুর! আমি গত রাত্রে এক আশ্চার্য্য স্বপ্ন দেখেছি। খলিফা বললেন, কি স্বপ্ন দেখছ? সে তখন বলল আমি দেখলাম কিয়ামত শুরু হয়ে গেছে, মিজান পাল্লা খাঁড়া করা হয়েছে, পুল ছেরাতের রাস্তাও তৈরী হয়েছে, আর সমস্ত বাদশাহ খলিফাদের ঐ পুলছেরাত পার হওয়ার জন্য ডাকা হচ্ছে।
প্রথমে আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ান কে ডাকা হল এবং বলা হল এটা পার হও, সে পুল ছেরাতের উপর পা রাখল কিন্তু চলতে পারলনা, জাহান্নামের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হল। তারপর ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালেককে ডাকা হল এবং বলা হল পুলছেরাত পার হও, সেও পুল ছেরাতের উপর পা রাখল আর সঙ্গে সঙ্গেই জাহান্নামের মধ্যে পড়ে গেল।
এই রূপ আবস্থা
ثُمَّ جَاؤُبُكَ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ আমিরাল মোমেনীন, আপনাকে ডাকা হল, দাসী যখনই এই কথা বলল, খলিফা ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ (রঃ) চীখ মেরে ক্রন্দন করতে লাগলেন এবং এমন ভাবে লাফাতে লাগলেন যেমন জালের মধ্যে মাছ লাফায় এবং জমিনে ও দেওয়ালে মাথা ঠুকতে লাগলেন, দাসী তখন চিল্লে বলতে লাগল-
وَالْجَارِيَةُ تَصِيحُ وَ تَقُولُ وَاللهِ رَأَيْتُ أَنَّكَ فِي الْجَنَّةِ وَ جَاوَزَتَ الصراط سالماً
হুজুর, আল্লাহর কসম করে বলছি, আপনাকে আমি জান্নাতে দেখেছি এবং সহীহ সালামতে পুলছেরাত অতিক্রম করেছেন। কিন্তু বাদশাহ দাসীর কথার দিকে ভ্রুক্ষেপ করছেন না। পুলছেরাত একটি ভয়াবহ দীর্ঘ লম্বা রাস্ত । যা অতিক্রম করা আল্লাহর রহমত ছাড়া অসম্ভব।
☆ বেহেস্তের দরওয়াজা বন্ধ হওয়া:-
বেহেস্তের দরওয়াজা বন্ধ থাকে, বিশেষ বিশেষ সময়ে আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে খুলে দেওয়া হয় যেমন রসুলপাক (সঃ) বলেছেন, রমজান শরীফের মাসে বেহেস্তের দরওয়াজা খুলে দেওয়া হয় وَتُفْتَحُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ ।
বেহেশতে সম্পর্কে দাকায়েকুল আখবার কিতাবে হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, বেহেস্তে জাওহার খোচিত সোনার আটটি দরওয়াজা আছে এবং দরওয়াজার উপরে লেখা আছে-
وَهُوَ بَابُ الأَنْبِيَاءِ وَالْمُرْسَلِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالْأَسْخِيَاءِ দরওয়াজাটি নবী, রসুল, শহিদান এবং দাতাগণের প্রবেশের দরওয়াজা।
الثَّانِي بَابُ الْمُصَلِّينَ الَّذِينَ يُكْمِلُونَ الصَّلوةَ وَالْوَضُوءَ
দ্বিতীয় – দরওয়াজায় লেখা আছে, এই দরওয়াজাটি ঐ সমস্ত নামাজীদের প্রবেশের জন্য, যারা মোকাম্মাল ভাবে ওজু করেছে এবং পুরাপুরী ভাবে নামাজ আদায় করেছে।
الثَّالِثُ بَابُ الْمُزَكِينَ أَمْوَالَهُمُ
তৃতীয় – দরোজায় লেখা আছে, এই দরোজাটি জাকাত প্রদান কারী বান্দাদের জন্য।
الرَّابِعُ بَابُ الأَمْرِينَ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّاهِينَ عَنِ الْمُنْكَرِ
চতুর্থ – দরোজায় লেখা আছে, এই দরোজাটি ঐ সমস্ত মানুষের প্রবেশের জন্য, যারা সৎ ও নেক কাজের দিকে মানুষকে আহ্বান করে আর অসৎ মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করে।
الْخَامِسُ بَابُ مَنْ قَطَعَ نَفْسَهُ عَنِ الشَّهَوَاتِ
পঞ্চম – দরোজায় লেখা আছে এই দরোজাটি ঐ সমস্ত মানুষের জন্য, যারা নিজেকে মন্দ প্রবৃত্তি থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছে।
السَّادِسُ بَابُ الْحُجَّاجِ وَالْمُعْتَمِرِينَ
ষষ্ঠ – দরোজায় লেখা আছে এই দরোজাটি হজ্জ্ব ও ওমরা কারীদের প্রবেশের
জন্য।
السَّابِعُ بَابُ الْمُجَاهِدِينَ
সপ্তম – দরোজায় লেখা আছে- এই দরোজার্টি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ কারী
বান্দাদের জন্য। الثَّامِنُ بَابُ الَّذِينَ يَغُضُّونَ أَبْصَارَهُمْ عَنِ الْمَحَارِمِ وَ يَعْمَلُونَ الْخَيْرَاتِ وَ الْحَسَنَاتِ مِنْ بِرِّ الْوَالِدَيْنِ وَ صِلَةِ الرَّحِمِ وَ غَيْرِ ذَالِكَ
مِنَ الْأَعْمَالَ الْحَسَنَةِ
অষ্টম – দরোজায় লেখা আছে- ঐ দরোজাটি ঐ সমস্ত মানুষের জন্য, যারা নিজের চোখকে নিষিদ্ধ জিনিষ থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে এবং সৎ কাজ ও নেক আমলগুলি করেছে, যেমন পিতা-মাতার সেবা ও আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক ইত্যাদি নেক আমল।
উপরোক্ত বর্ণিত পাঁচটি কঠিন বিপদ থেকে বাঁচাবার জন্য আল্লাহর রসুল কি সুন্দর পন্থা বলে দিলেন, লক্ষ্য করুন-
مَنْ حَافَظَ عَلَى الصَّلُوةِ اكْرَمَهُ اللَّهُ بِخَمْسٍ خِصَالٍ يَرْفَعُ عَنْهُ ضِيِّقَ
الْمَوْتِ وَ عَذَابَ الْقَبْرِ وَ يُعْطِيهِ اللهُ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ وَ يَمُرُّ عَلَى الصِّرَاطِ
كَالْبَرْقِ وَيَدْخُلُ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ
যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে পাঁচটি বিষয় দান করবেন।
(১) মৃ-ত্যু-র কষ্ট হতে বাঁচাবেন।
(২) কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবেন।
(৩) তার আমল নামা ডান হাতে দান করবেন।
(৪) পুলসেরাত বিদ্যুৎ বেগে পার করাবেন।
(৫) বিনা হিসাবে বেহেস্ত প্রবেশ করাবেন। আল্লাহ তায়ালা তওফীক দান করুন, আমরা সঠিক ভাবে নামাজ আদায় করে কিয়ামতের ময়দানে উক্ত বিপদ গুলি হতে পরিত্রাণ পেতে দাবি। আমীন।
সাত আসমানে ফিরিশতাদের এবাদাতের সমস্টি নামাজ
উম্মতে মোহাম্মাদীগণ নামাজ আদায় করে এবং তার মধ্যকার সাতটি ফরজও আদায় করে যেমন-
(১) তকবিরে তাহরিমা
(২) কিয়াম
(৩) কেরাত বা তিলাওয়াত
(৪) রুকু
(৫) সেজদা
(৬) শেষ বৈঠক
(৭) সালাম ফিরান।
সমগ্র সাতস্থর আসমানে সাত দল ফেরেস্তা পৃথক পৃথক ভাবে সাত তরিকায় এবাদাতের মধ্যে মশগুল আছেন। যেমন-
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ وَ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ ۖ قَالَ لَمَّا عَرَجَ النَّبِيُّ ﷺ لَيْلَهُ المعراج إلى السموات رأى في السَّمَاءِ الأُولَى مَلَائِكَةُ يَذْكُرُونَ الله تَعَالَى مُذْ خَلَقَهُمُ اللَّهُ تَعَالَى وَفِي الثَّانِيَةِ مَلَائِكَةُ يَرْكَعُونَ اللهَ تَعَالَى منْ خَلَقَهُمُ اللَّهُ تَعَالَى لَا يَرْفَعُونَ رُؤسَهُمْ وَ فِي الثَّالِثَةِ رَأَى مَلائِكَةٌ يَسْجُدُونَ اللَّهَ تَعَالَى مُدْ خَلَقَهُمُ اللَّهُ تَعَالَى لَا يَرْفَعُونَ رُؤسَهُمْ إِلا حِيْنَ سَلَّمَ عَلَيْهِمْ نَبِيُّ مُحَمَّدٌ رَفَعُوا رُؤسَهُمْ وَرَدَّ السَّلامَ
عَلَى النَّبِيِّ ﷺ ثُمَّ سَجَدُوا ثَانِيَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَلِذَلِكَ صَارَتِ السَّجَدَةُ اثْنَيْنِ وَفِي الرَّابِعَةِ رَأَى مَلَائِكَةُ يَسْهُدُونَ وَفِي الْخَامِسَةِ رَأَى مَلَائِكَةٌ مُسَبِّحِينَ مَلَائِكَةٌ مُسْلِمِينَ مُدْ خَلَقَهُمُ اللَّهَ تَعَالَى فَهُمْ قَلْبُ النَّبِيِّ ﷺ وَأَشْتَهَى أَن يَكُونَ لَهُ وَلأُمَّتِهِ هَذِهِ الْعِبَادَاتُ كُلُّهَا فَعَلِمَ اللَّهُ تَعَالَى هَمَّهُ وَاشْتَيَاقَهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَجَمَعَ عِبَادَاتِ مَلائِكَةِ السَّمَوَاتِ السبع وَاكْرَمَ نَبِيَّهُ عَلَيْهِ السَّلامُ وَقَالَ مَنْ أَذًى الصَّلَوَاتِ الْخَمْسَ نَالَ عِبَادَةَ مَلائِكَةِ السَّموات السبع (روضة الاحباب)
হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল এবং হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মি’রাজের রাত্রিতে যখন নবী পাক (সঃ) আসমানে গেলেন, তখন
প্রথম আসমানে দেখলেন একদল ফেরেস্তা সৃষ্টির পর থেকে যুগ যুগান্তর ধরে আল্লাহর জিকির ও তিলাওয়াতের মধ্যে নিযুক্ত আছেন।
দ্বিতীয় আসমানে দেখলেন একদল ফেরেস্তা সৃষ্টির পর থেকে রুকুতে আছেন এবং আল্লাহর তসবিহ পড়ছেন।
তৃতীয় আসমানে দেখলেন, একদল ফেরেস্তা সৃষ্টির পর থেকে সেজদাতে পড়ে আল্লাহর তসবিহ পড়ছেন, তারা কখনও মাথা তোলেন না, কিন্তু যখন আমাদের নবী মুহাম্মদ (সঃ) সালাম দিলেন, তখন মাথা তুললেন এবং সালামের উত্তর দিলেন, অতঃপর দ্বিতীয় বার সেজদায় পড়ে গেলেন। কিয়ামত পর্যন্ত ঐ রূপ অবস্থায় থাকবেন। এই জন্য নামাজে দুবার সেজদা করতে হয়।
চতুর্থ আসমানে দেখলেন একদল ফেরেস্তা যুগ যুগান্তর ব্যাপি তাশাহুদের হালাতে তাশাহুদ পড়তেই আছেন।
পঞ্চম আসমানে দেখলেন, একদল ফেরেস্তা রাত ও দিন সর্বক্ষণ তাসবিহ পড়তে রত আছেন।
ষষ্ঠ আসমানে দেখলেন, একদল ফেরেস্তা অনবরত সালাম পড়তেই আছেন, সৃষ্টির পর থেকে কিয়ামত
পর্যন্ত এই ভাবে সালাম পড়তে থাকবেন। নবী মুহাম্মদ (সঃ) মনে মনে ইচ্ছা করলেন যে, আল্লাহ তায়ালা যদি ঐ সমস্ত ফেরেস্তাদের সমূহ এবাদাত আমার উম্মতদের জন্য হত! আল্লাহ তায়ালা নবী (সঃ) এঁর মনের ভাব বুঝতে পেরে জানিয়ে দিলেন, যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন, তারা সাত আসমানের ফেরোদিগের এবাদাতের সওয়াব প্রাপ্ত হবেন। এই জন্য উম্মতে মুহাম্মদীগণ আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ।
—————————سبحان الله وبحمده سبحان الله العظيم