Table of Contents
জামায়াতের সহিত নামাজ পড়ার দলীল
জামায়াতের সহিত নামাজ পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদা যা ওয়াজিবের কাছাকাছি। কোন কোন কেতাবে জামায়াতের সহিত নামাজ পড়া ওয়াজিব বলা হয়েছে। এবং এটাই সমোধিক আলেমের মত বলা হয়েছে।
জামায়াতের ফজিলত :- কুরআন শরীফের মধ্যে আল্লাহ পাক বলেন-
وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِين একাধিক তাফসীরের কিতাবে বলা হয়েছে যে-আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ তোমরা নামাজ আদায় কারীদের সাথে নামাজ আদায় কর। বোখারী এবং মুসলিম শরীফে আছে, হজরত ইবনে উমার (রাঃ) হুজুর (সঃ) থেকে বয়ান করেন যে জামায়াতের সহিত নামাজ পড়লে একা নামাজ পড়ার থেকে ২৭ গুন বেশী ছওয়াব পাওয়া যায়।
হুজুর (সঃ) বলেন যে, নামাজের অপেক্ষায় যে সময় অতিবাহিত হয় ঐ সময় নামাজের মধ্যে গণ্য করা হয়। অর্থাৎ নামাজের ছওয়াব পাওয়া যায়। (বুখারী)
তিরমিজি শরীফের এক হাদীসে হজরত আসলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, হুজুর (সঃ) বলেন যে ঐ সমস্ত লোকদের কে এই কথার সুসংবাদ শুনিয়ে দাও যারা রাতের অন্ধকারে জামায়াতের জন্য মসজিদে আসে তাদের জন্য কেয়ামতের দিন সম্পূর্ণ জ্যোতি হবে। এ ছাড়া হাদীস শরীফের মধ্যে বহু হাদীস জামায়াত সম্বন্ধে বর্ণিত হয়েছে। যদি তা একত্রিত করা হয় তাহলে একটা মোটা কিতাব হয়ে যাবে।
মাসয়ালা :- যদি জামায়াত রহিত হওয়ার কোন কারণ না থাকে তাহলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য জামায়াত ওয়াজিব। উক্ত নামাজ মাসজিদে পড়া হোক বা বাড়ীতে পড়া হোক।
মাসয়ালা :- তারাবীহ নামাজের জন্য জামায়াত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ কেফায়া (বাহরুর রাইক)
মাসয়ালাঃ-রমজান মাসে বিত্র নামাজ জামায়াতের সহিত পড়া মুস্তাহাব (বাহরুর রাইক)
মাসয়ালা :- রমজান ছাড়া অন্য মাসে বিতর নামাজ জামায়াতের সহিত আদায় করা মাকরূহ। (বাহরুর রাইক)
মাসয়ালা :- যদি কোন নফল নামাজ লোক ডেকে একত্রিত করে অথবা আজান একামত দিয়ে আদায় করা হয়, অথবা চন্দ্রগ্রহনের নামাজ যদি জামায়াতের সহিত আদায় করা হয় তাহলে মাকরূহ তাহরিমী হবে। (বাহরুর রাইক)
মাসয়ালা :- মসজিদে জামায়াত হয়ে গেলে, অন্যত্র জমায়াত করে নিলে ও সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে।
মাসয়ালা :- যদি কোন ব্যক্তি বাড়ীতে একাকি নামাজ পড়ে নেন, এবার মসজিদে দেখেন জামায়াত হচ্ছে তাহলে যদি জোহর অথবা ইশার নামাজ হয় তাহলে ঐ নামাজে শরীক হতে পারেন। আর যদি ফজর, আছর ও মগরিবের নামাজ হয় তাহলে জামায়াতে শরীক হবেন না।
মাসয়ালা :- যদি কোন ব্যক্তি ফরজ নামাজ শুরু করে দেন, এবার দেখেন যে ফরজ নামাজের জমায়াত শুরু হচ্ছে তাহলে নামাজ ভঙ্গ করে জামায়াতে শরীক হয়ে যাবেন।
মাসয়ালা :- যদি কোন ব্যক্তি নফল শুরু করেন তার পর ফরজ নামাজের জামায়াত শুরু হয় তাহলে যদি চার রাকাতের নিয়ত করে থাকেন দুই রাকাত পূর্ণ করে সালাম ফিরিয়ে নামাজে শরীক হয়ে যাবেন।
মাসয়ালা :- ইমামের সহিত কোন রাকাতের রুকু পেলেও ঐ রাকাত পাওয়া বলে গণ্য হবে। যদি রুকু না পাওয়া যায় তাহলে উক্ত রাকাত পাওয়ার মধ্যে গণ্য হবে না।
হাদীস পাকের মধ্যে হুজুর (সঃ) বলেন,
ইসলামের ভীত ৫টি বস্তুর উপর রাখা হয়েছে।
(১) এই কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ব্যতিত কোন উপাস্য নেই এবং হজরত মুহাম্মাদ (সঃ) আল্লাহর রসুল।
(২) নামাজ কায়েম করা।
(৩) রমজান শরীফে রোজা রাখা।
(৪) জাকাত দেওয়া।
(৫) এবং হজ্ব করা, ঐ ব্যক্তির উপর যে হজ্ব করার সমর্থ রাখে।
কুরআন শরীফে একাধিক জায়গাতে আল্লাহ তায়ালা বলেন-أَقِيمُوا الصَّلوٰةَ অর্থাৎ নামাজ কায়েম করো।
অপর এক হাদীসে আছে যে কেয়ামতের দিন বান্দাকে সর্বপ্রথম নামাজ সম্বন্ধেই প্রশ্ন করা হবে। এই হাদীস থেকেই নামাজের প্রাধান্য ও গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। নামাজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবাদাত। এই নামাজ মোমিনদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা ফরজ করেছেন। এর ফজিলত ও গুরুত্ব বিভিন্ন হাদীসের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে।
কিবলাহর সংক্ষিপ্ত পরিচয়:-
কুরআন পাকে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِّلْعَلَمِينَ
অর্থাৎ পৃথিবীর বুকে সর্বপ্রথম ঘর যার ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে মানব জাতির উদ্দেশ্যে, সেটি অবশ্যই ঐ ঘর যেটি মক্কায় অবস্থিত যা মানুষের জন্য কল্যাণ কর এবং সমস্ত জগৎ বাসীর জন্য পথ প্রদর্শক।
উক্ত ঘর একে বারে বাইতুল মা’মুরের সরাসরি যা ফেরেস্তাগণের কেবলা। উক্ত ঘর সম্বন্ধে মুফাস্সিরগণ বলেন এর ভিত্তিস্থাপন করেন, আল্লাহর পবিত্র ফেরেস্তাগণ। হজরত নূহ (আঃ) এঁর জমানার মহাপ্লাবনে ধ্বংস হয়ে যায়। পরবর্তিতে হজরত ইবরাহীম (আঃ) তার পুত্র হজরত ইসমাঈল (আঃ) কে নিয়ে পুনরায় নির্মান করেন।
হজরত নবী করীম (সঃ) নবুওয়াত প্রাপ্ত হওয়ার পর মক্কা বাসীদের পূর্ব নিয়ম অনুযায়ী এই ঘর অর্থাৎ কা’বা শরীফই কিবলা ছিল। মুসলমানগণ এ দিকে মুখ করেই নামাজ পড়তেন। মদীনা শরীফ হিজরত করার পর মদীনার ইয়াহুদীদের মন আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ পাক বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামাজ পড়ার নির্দেশ দেন।
অতঃপর ইয়াহুদীরা বলতে লাগল আমাদের ধর্ম সঠিক তা নাহলে মুহাম্মাদ (সঃ) আমাদের কিবলার দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে কেন। এদিকে হুজুর (সঃ) এঁরও আন্তরিক টান বাপ দাদার কিবলা হওয়ার কারণে কাবা শরীফের দিকে ছিল। তাই আল্লাহ তায়ালার পুনরায় নির্দেশ হল-
وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِ وَجَهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ
مَا كُنتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ
অর্থ আপনি যেখান থেকে বার হন না কেন আপনি নিজ চেহারা কে মসজিদে হারামের দিকে রাখুন। আর তোমরাও যেথায় হতে বার হবে ঐ দিকেই মুখ করবে।
তাই আমাদের কিবলা খানায়ে কা’বা। নামাজে আমাদের মুখ ঐ খানায়ে কা’বার দিকেই থাকবে।
মাসয়ালা :- মক্কা বাসীদের মধ্যে যে ব্যক্তি কা’বা গৃহ দেখতে পায়, তার পক্ষে অবিকল কাবা গৃহের দিকে মুখ করা ফরজ কিনা এতে উলামাদের মতভেদ আছে।
মাসয়ালা :- অন্য দেশের বসবাস কারীদের জন্য কা’বার “জেহাতের” দিকে মুখ করলে নামাজ হয়ে যাবে অবিকল কাবার দিকে মুখ করা জরুরি নয়।
জেহাত সম্বন্ধে আল্লামা রুহুল আমীন (রঃ) তাঁর নামাজ শিক্ষায় যে বর্ণনা দিয়েছেন তা উদ্ধৃতি করা হল-
“কা’বার জেহাত কি তাহাই বুঝা দরকার” একটি অর্দ্ধবৃত্ত রেখা টানিতে হইবে। অর্দ্ধবৃত্তকে ১৮০ ডিগ্রী বলা হয়। উহার মাঝ খান হইতে সমকোন বিশিষ্ট একটি সরল রেখা টানিলে ৯০ ডিগ্রী হয়, উহার দুই ধার হইতে দুইটি সরল রেখা পরিধি পর্যন্ত টানিলে, ডাহিন দিকটার রেখার
উপরিস্থ বিন্দু টাকে ৪৫০ ডিগ্রী বলা হয় এবং বাম দিকটার উপরিস্থ বিন্দুটাকে ১৩৫ ডিগ্রী বলা হয়। ৯০ ডিগ্রীর স্থল কে কা’বা ধরিতে হইবে। যদি নামাজির মুখ ডাহিন দিকে ৪৫° ডিগ্রীর মধ্যে থাকে এবং বাম দিকে ১৩৫ ডিগ্রীর মধ্যে থাকে তবে বুঝিতে হইবে যে, নামাজির মুখ কা’বার “জেহাতে” আছে। আর ৪৫০ ডিগ্রীর ডাহিন দিকেও ১৩৫ ডিগ্রীর বাম দিকে মুখ হইলে, নামাজির মুখ কা’বার “জেহাতে” হইবে না। ইহাতে তাহার নামাজ জায়েজ হইবে না। সকল কে বুঝাইবার জন্য
একটা অর্দ্ধবৃত্তের নকশা টানিয়া দেখান হইল
শহর ও গ্রাম সমূহ ছাহাবা ও তাবেয়িনগণের স্থাপিত মেহরাব দ্বারা সমুদ্র ও ময়দান সমূহে কোতব (ধ্রুব) নক্ষত্র দ্বারা কা’বা নির্ণয় করিবে। আমাদের দেশে ধ্রুব নক্ষত্র ঠিক উত্তর দিকে থাকে। শরহো-যাদোল ফকির ও অন্যান্য বিশ্বাসযোগ্য কেতাবগুলিতে আছে, গরম কালের সবচেয়ে বড় দিবস যে স্থলে সূর্য্য ডুবিয়া যায়। সেই বরাবর একটি চিহ্ন স্থাপন করিবে।
আর শীত কালে সবচেয়ে ছোট দিবসে যে স্থলে সূর্য্য ডুবিয়া যায়, সেই বরাবর একটি চিহ্ন স্থাপন করিবে। ডাহিন দিকে দুই তৃতীয়াংশ ছাড়িয়া দিবে এবং বাম দিকে এক তৃতীয়াংশ ছাড়িয়া দিবে, উহার মধ্যস্থলে “কেবলাহ” বুজতে হবে। আর যদি সূর্য্য অস্তমিত হওয়ার স্থান উভয় স্থলের সীমার মধ্যে পড়ে, এই ভাবে মুখ করে নামাজ পড়েলে তবে নামাজ জায়েজ হইবে। আর উভয় সীমার বাহিরের দিকে মুখ করলে নামাজ হইবে না”।
জামায়াতের সহিত নামাজ পড়ার গুরুত্ব ও মাসয়ালা :- যদি কেউ এমন জায়গায় উপস্থিত হয় যে, কেবলার দিক নির্নয় করতে না পারে তাহলে কাছে কেউ থাকলে তাকে জিজ্ঞাসা করে দিক ঠিক করবে। যদি জিজ্ঞাসা না করে নামাজ পড়ে, নামাজ জায়েজ হবে না।
জামায়াতের সহিত নামাজ পড়ার গুরুত্ব ও মাসয়ালা :- যদি সেখানে জিজ্ঞাসা করার মত কেউ না থাকে তাহলে খুব চিন্তা করে একটা দিক ঠিক করার পর সে দিক মুখ করে নামাজ পড়লে নামাজ জায়েজ হয়ে যাবে। যদি নামাজ পড়ার পর জানতে পারে যে, নির্নয়কৃত দিক ভুল ছিল তাও নামাজ হয়ে যাবে এবং উক্ত নামাজ পুনরায় পড়তে হবে না।
জামায়াতের সহিত নামাজ পড়ার গুরুত্ব ও মাসয়ালা :- যদি চিন্তা গবেষণা না করেই কোন এক দিক ফিরে নামাজ পড়ে নেয় তাহলে তার নামাজ জায়েজ হবে না। তবে নামাজের পর যদি নিশ্চিত রূপে জানতে পারে যে তার মুখ কিবলার দিকেই ছিল তাহলে নামাজ হয়ে যাবে।
আর যদি নামাজের পর সেই দিকে কিবলা হওয়ার ধারণা হয় বা নামাজের মধ্যেই সেই দিকে কিবলা হওয়া নিশ্চিত রূপে জানতে পারে, তাও নামাজ জায়েজ হবে না।
জামায়াতের সহিত নামাজ পড়ার গুরুত্ব ও মাসয়ালা :- নামাজ আরম্ভ করার পর যদি বুঝতে পারে যে কিবলা এদিকে নয় বরং ঐ দিকে তাহলে নামাজের মধ্যেই সেই দিকে ঘুরে নামাজ পড়বে। কিন্তু যদি জানার পর তিন বার “সোবহানাল্লাহ” পড়ার সময় পরিমান দেরী, করে তাহলে নামাজ জায়েজ হবে না।