সাদকায়ে ফিতর বা ফিতরার গুরুত্ব নিয়ে-
আল্লামা তাহতাবী (রঃ) মারাকিউল ফালাহের ব্যাখ্যায় লিখেছেন যে সাদকায়ে ফিতর দিলে, রোজা আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয় তাছাড়া আল্লাহ তায়ালা যে আমাদের কে এই মহত্ত্বপূর্ণ পবিত্র মাস দান করেছেন তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ হয়।
ইলমুল ফিকাহ কিতাবে হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা কিতাবের বরাত দিয়ে বর্ণিত আছে যে, ঈদুল ফিতরের দিন এই সাদকা নির্দেশিত হওয়ার কারণ এটা বোঝা যায় যে, এই পবিত্র দিন খুশী ও আনন্দের দিন।
উক্ত দিনে ইসলামের মহাত্ত্ব ও গুরুত্ব অধিক জন সমাগম দ্বারা দেখানো হয়। উপরন্ত সাদকা দিলে তা অধিক পরিমান প্রকাশিত হয়। তাছাড়া এই সাদকায়ে ফিতর দ্বারা রোজা পরিপূর্ণ হয়।
Table of Contents
ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার তিনটি শর্ত।
(১) আজাদ (স্বাধীন) হওয়া
(২) মুসলমান হওয়া।
(৩) কোন একটি নেসাবের মালিক হওয়া।
কখন সাদকায়ে ফিতর দেওয়া ওয়াজিব হয়।
মাসয়ালা :- যদি কোন ব্যক্তি ঈদুল ফিৎরের সকালে এত পরিমান টাকা বা সম্পদের মালিক হয় যা এক বছর থাকলে জাকাত ওয়াজিব হয়। তার উপর ফিত্রা দেওয়া ওয়াজিব।
মাসয়ালা :- উক্ত সম্পদ বা টাকা পয়সা এক বছর মৌজুদ থাকা শর্ত নয়। কেবল ঐ দিন সকালে থাকলেই চলবে।
মাসয়ালা :- ঈদের দিন ফজরের সময় হতে ফেতরা ওয়াজিব হয়। যদি কেউ ফজরের পূর্বে মারা যায়, তার উপর ওয়াজিব হবে না। এমনই যদি কেউ ফজরের সময় জন্ম নেয় তার উপর ওয়াজিব হবে।
মাসয়ালা :- যদি কেউ ঈদের দিনের ফজরের পূর্বে, রমজানের ভীতরে ফেৎরা দিয়ে দেয় তাহলে আদায় হয়ে যাবে।
মাসয়ালা :- ফিতরা ঈদের নামাজের পূর্বে দিতে হয়। যদি কেউ না দিতে পারেন তাহলে যত সত্ত্বর সম্ভব আদায় করে দিতে হবে। তা না হলে গোনাহগার হবেন।
মাসয়ালা :- সাদকায়ে ফিতর নিজের এবং নিজের নাবালেগ সন্তানদের তরফ হতে আদায় করা ওয়াজিব। বালেগ সন্তান বা স্ত্রীর ফিত্রা তার উপর ওয়াজিব নয়। তবে যদি আদায় করে দেয় আদায় হয়ে যাবে।
জাকাত ওয়াজিব না হলেও ফিতরা ওয়াজিব হবে।
মাসয়ালা :– যদি কারো কোন এমন জমি পড়ে থাকে যাতে কোন ফসল হয় না যার মূল্য নেসাব পরিমান বা বাড়ীতে একটা ঘর পড়ে আছে যাতে কেউ বাস করে না যার মূল্য নেসাব পরিমান বা বাড়ীতে একটা বাক্স পড়ে আছে যা কোন কাজে লাগে না এবং তার মূল্য নেসাব পরিমান তাহলে উক্ত জিনিস গুলিতে জাকাত ওয়াজিব হবে না তবে সাদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হবে।
মাসয়ালা :- সাদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হওয়ার জন্য বালিগ হওয়া বা আকিল (বুদ্ধিমান) হওয়া শর্ত নয়। নাবালিগ ও পাগল যদি নেসাবের মালিক হয় ফিত্রা ওয়াজিব হবে। তাদের তরফ থেকে ওলী আদায় করে দেবে যদি ওলী আদায় না করে তাহলে বালিগ হওয়ার পর এবং সুস্থ হওয়ার পর আদায় করবে। (রদ্দুল মুহতার)
মাসয়ালা :- ফিত্রা দেওয়ার জন্য রোজা রাখা শর্ত নয়। যদি কেউ কোন কারণ বশতঃ রমজান শরীফের রোজা না রাখতে পারেন তাও তার উপর নেসাবের মালিক হলে ফিত্রা ওয়াজিব হবে।
মাসয়ালা :- যদি কেউ গম জব ইত্যাদি না দিয়ে তার মূল্য দেয় বা উক্ত মূল্যের অন্য দ্রব্য দেয় তাও জায়েজ হবে।
কাকে ফিতরা দেওয়া জায়েজ।
মাসয়ালা :- যে ব্যক্তি জাকাত গ্রহনের উপযুক্ত সে ফিত্রারও উপযুক্ত। তাকে ফিত্রা দেওয়া জায়েজ।
মাসয়ালা :- ফিতরা একজন গরীব কে অথবা বহুজন গরীব কে ভাগ করে দেওয়া জায়েজ। অনুরূপ বহুজনের ফিত্রা ও একজন কে দেওয়া জায়েজ। (ফাতাওয়ায়ে সিদ্দিকীয়া- ১/২০০)
আল্লাহ পাকের উপর ভরসা বা তাওয়াক্কুল
আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে মোমেন দের সাথে ওয়াদা করেছেন যে,তাঁর উপর ভরসা করলে তিনি ভরসা কারীর জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। আল্লাহ পাক তার রাহমাতের ভান্ডার থেকে তার সমস্ত প্রয়োজন মিটিয়ে থাকেন। তার সমস্ত অভাব অভিযোগের সমাধান করে দেন। স্বয়ং আল্লাহ পাক তার উপর ভরসা কারীদের সম্পর্কে ,কুরআন শরীফে ৪ পারা,সুরা আল ইমরান,১৫৯ আয়াতে বলেন-
إن الله يحب المتوكلين (سوره ال عمران)
অর্থাৎ নিশ্চয় আল্লাহ পাক তার উপর ভরসা করি দের ভালো বসেন।
১৯ পারা ,সুরা আহজাব ,৩ আয়াতে আল্লাহ বলেন
وَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ وَكَفَى بِاللهِ وَكِيلاً (سوره احزاب
অর্থাৎ আল্লাহর উপর ভরসা কর, তিনি তোমার তত্ত্বাবধান কারী হিসাবে যথেষ্ট। ৫ পারা, সুরা নিসা, ৪৫ আয়াতে বলেন
-وَكَفَى بِاللهِ وَلِيّاً وَكَفَى بِاللهِ نَصِيراً (سوره نساء
অর্থাৎ ওলি ও সাহায্যকারী হিসাবে আল্লাহ পাকই যথেষ্ট। ৬ পারা, সুরা
মায়েদা, ২৩ আয়াতে বলেন-
وَعَلَى اللَّهِ فَتَوَكَّلُوا إِن كُنتُمْ مُؤْمِنِينَ (سوره مائده)
অর্থাৎ যদি তোমরা মোমিন হও, তাহলে আল্লাহর উপরেই ভরসা কর।
পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর রিজিক আল্লাহ পাকের জিম্মায়। (সুরা হুদ) নিশ্চয় শয়তানের রাজত্ব ঐ সমস্ত লোকদের উপর চলেনা, যারা
আল্লাহর উপর ইমান আনে এবং তার উপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে। (সুরা নাহল) আয়াত নং ১০০
যে ব্যক্তি আল্লাহ পাকের উপর ভরসা রাখে, আল্লাহ তাকে জয় যুক্ত করেন। (সুরা আনফাল)
তুমি সেই চিরঞ্জীব প্রভূর উপর ভরসা কর, যার কোন মৃত্যু নেই।
(সুরা ফুরকান)
আল্লাহর উপর ভরসা কর এবং আল্লাহ পাকেই যথেষ্ট তত্ত্বাবধায়ক।
(সুরা আহজাব)
সুতরাং আল্লাহ পাকের কাছে রিজিক প্রর্থনা কর। তাঁর এবাদত কর ও তার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।
(সুরা আনকাবুত)