ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের একটি হলো জাকাত।যাকাত কি? জাকাত হলো ফরজ। আল্লাহ রব্বুল আলামীন মহাগ্রন্থ কুরআন পাকের মধ্যে একাধিক স্থানে নামাজের সাথে জাকাতের কথা বলেছেন।
وَاقِيمُوا الصَّلوةَ وَاتُوا الزَّكوة অপর দিকে জাকাত আদায় না করায় ভয়ঙ্কর শাস্তির কথা উল্লেখ করে বলেন-
وَالَّذِينَ يَكْتِرُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرُهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكُوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمُ هَذَا مَا كَنَرْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا
كُنتُمْ تَكْثِرُونَ
অর্থাৎ আর যারা স্বর্ণ রৌপ্য সঞ্চয় করে এবং তা আল্লাহার পথে ব্যয় করে না, হে নবী! আপনি তাদের কে যন্ত্রনা দায়ক শাস্তির সংবাদ শুনিয়ে দিন।
সে দিন যে দিন তাদের ঐ সঞ্চিত স্বর্ণ রৌপ্য জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে অতঃপর তা দ্বারা তাদের মুখ মণ্ডলে, পার্শ্বদেশে ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হবে। (তাদের কে বলা হবে) এ সব ঐ সমস্ত বস্তু যা তোমরা নিজেদের জন্য সঞ্চয় করেছিলে। এখন যা তোমরা সঞ্চয় করেছিলে তার স্বাদ গ্রহণ কর।
তিরমিজী শরীফে হজরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে হজরত রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন সাদকা আল্লাহর গজব কে ঠাণ্ডা করে এবং অপঘাত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচায়।জাকাতের অর্থ পবিত্র হওয়া বা বর্দ্ধিত হওয়া। পারিভাষিক অর্থে নিজ মালের নিদৃষ্ট পরিমান হতে শরীয়াত নির্দেশিত অংশের, কোন হকদার কে মালিক বানিয়ে দেওয়া।
মাসয়ালা :- মুসলমান হওয়া কোন কাফিরের উপর জাকাত ফরজ নয়।
মাসয়ালা :- বালিগ হওয়া অর্থাৎ প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া কোন নাবালিগের অধীনে যতই মাল থাক না কেন তার উপর কোন জাকাত ফরজ হবে না।
মাসয়ালা :- বুদ্ধিমান হওয়া কোন পাগলের উপর জাকাত ফরজ নয়।
মাসয়ালা :- জাকাত ফরজ হওয়ার জ্ঞান থাকা। যদি কেউ দারুল হারবে বসবাস করে এবং সে জাকাত ফরজ হওয়ার ব্যাপারে অজ্ঞ হয় তাহলে জাকাত ফরজ হবে না।
মাসয়ালা :- এমন বস্তুর মালিক হওয়া যা পূর্ণ বছর থাকে। অতএব ক্ষীরা তরমুজ, কাকুড় ইত্যাদির মালিক হলে জাকাত ফরজ হবে না।
মাসয়ালা :- উক্ত মালের উপর পূর্ণ এক বৎসর অতি বাহিত হওয়া।
মাসয়ালা :- বছরের শুরু এবং শেষে পূর্ণ নেসাব থাকতে হবে। যদি বছরের মাঝে নেসাব কম হয়ে যায় এবং শুরু ও শেষ পূর্ণ থাকে তাহলে জাকাত ওয়াজিব হবে।
মাসয়ালা :- ঋণমুক্ত হওয়া যদি ঋণ এত হয় যে ঋণ পরিশোধ করার পর নেসাব পরিমান মাল অবশিষ্ট থাকে না তাহলে জাকাত ফরজ হবে না। কিন্তু যদি ঋণ পরিশোধ করার পরে নেসাব পরিমান মাল থাকে তাহলে তার উপর জাকাত ফরজ হবে।
মাসয়ালা :- উক্ত মাল নিজ আসল প্রয়োজনাদি হতে অতিরিক্ত হওয়া। যেমন- পরিধানের পোষাক, থাকার ঘর, ঘরের প্রয়োজনীয় আসবাব পত্র ইত্যাদির উপর জাকাত ফরজ নয়।
মাসয়ালা :- মাল নিজের অথবা ওয়াকিলের কবজায় অর্থাৎ আয়ত্তে এবং মিলকিয়াত অর্থাৎ মালিকানা অধীনে থাকতে হবে। কোন মাল যদি মালিকানা অধীনে বা আয়ত্বে না থাকে তাহলে তার উপর জাকাত ফরজ হবে না।
মাসয়ালা :- কোন মাল যদি মালিকানা অধীনে থাকে কিন্তু আয়ত্বে না থাকে তাহলে তার উপর জাকাত ফরজ হবে না।
মাসয়ালা :- যদি কোন মাল রেহেন (বন্ধক) রাখা হয় তাহলে উক্ত মালের উপর জাকাত ফরজ হবে না। যেহেতু যিনি রেখেছেন এখন মাল তার আয়ত্বের বাইরে। আর যার কাছে রেখেছেন, মাল তার আয়ত্বে থাকলেও তিনি উক্ত মালের মালিক নন। অতএব কারো উপর জাকাত ফরজ হবে না।
মাসয়ালা :- যদি কোন মাল দীর্ঘ দিন ধরে হারিয়ে যায় তার পর তা পাওয়া গেলে, যতদিন তা হারিয়ে ছিল ততদিনের জাকাত ফরজ হবে না বরং যে দিন পাওয়া গেছে ঐ দিন থেকে হিসাব হবে।
মাসয়ালা :- যদি কাউকে কোন মাল বা টাকা পয়সা ধার দেওয়া হয় এবং যে নিয়েছে সে অস্বীকার করে, আর যে দিয়েছে তার কাছে কোন প্রমানাদি না থাকে, অতঃপর কোন দিন যে ধার নিয়েছে সে স্বীকার করল তাহলে যত দিন সে অস্বীকার করে ছিল ততদিন হিসাবের বাইরে থাকবে এবং ঐ দিনগুলিতে জাকাত ফরজ হবে না।
ঋণ দেওয়া টাকার উপর জাকাতের মাসায়েল
ফাতাওয়ায়ে সিদ্দিকীয়াতে ঋণ দেওয়া টাকার তিন প্রকার বর্ণনা করা হয়েছে। যার মর্ম নিম্নরূপ।
মাসয়ালা :- (প্রথম) নগদ সোনা, রূপা বা টাকা কাউকে ঋণ দেওয়া হলে কিংবা ব্যবসার দ্রব্য বিক্রি হলে যদি তার মূল্য বাকী থাকে এবং তা নেসাব পরিমান হয়, এক বছর বা দুবছর বা তিন বছর পর যদি আদায় হয় তাহলে উক্ত বছর গুলির জাকাত দেওয়া ওয়াজিব হবে।
মাসয়ালা :- (দ্বিতীয়) ব্যবসার দ্রব্য ব্যতীত যদি নিজ ব্যবহারের জন্য রাখা জিনিস বিক্রী করে। যেমন- পরনের কাপড়, বাড়ীর জিনিস পত্র বিক্রি করে তার মূল্য বাকী থাকলে এবং সাড়ে ৫২ ভরি রূপার মূল্যের সমান হলে যদি কয়েক বছর পর আদায় হয় তাহলে উক্ত বছর গুলির জাকাত দিতে হবে।
মাসয়ালা :- (তৃতীয়) মোহরের টাকা নেসাব পরিমান হলে স্বামী যখন আদায় করে দেবেন তখন থেকে তার জাকাতের হিসাব হবে।
মাসয়ালা :- যদি কেউ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই জাকাত দেয় তাহলে জাকাত দেওয়া জায়েজ। বছর পূর্ণ হলে ঐ বছরের জাকাত বুঝতে হবে।
মাসয়ালা :- কারো উপর জাকাত ফরজ ছিল কিন্তু সে আদায় করেনি। হঠাৎ তার সমস্ত মাল নষ্ট হয়ে গেল বা চুরি হয়ে গেল তাহলে তার জাকাত মাফ হয়ে যাবে। কিন্তু যদি ইচ্ছাকৃত নিজে নষ্ট করে দেয়
তাহলে জাকাত মাফ হবে না।
মাসয়ালা :- যদি কেউ অগ্রিম কয়েক বছরের জাকাত আদায় করে দেয় তাহলে তা জায়েজ আছে।
মাসয়ালা :- বছর পূর্ণ হওয়ার পর নিজের সমস্ত মাল দান করে দিলে তার জাকাত মাফ হয়ে যাবে।
তিন প্রকার মালের উপর জাকাত ওয়াজিব হয়
১। সোনা-রূপা বা সোনা রূপার অলঙ্কার বা নগদ টাকা পয়সা।
২। উট, গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল ইত্যাদি। উক্ত পশু গুলি যদি বছরে ছয় মাসের বেশী মাঠে বা জঙ্গলে চরে খায়।
৩। ব্যবসার মালপত্র।
মাসয়ালা :- ব্যবসা বানিজ্যের মালের মূল্য নির্দিষ্ট করে তার ৪০ ভাগের ১ভাগ বা শতকরা আড়াই টাকা জাকাত দিতে হবে।
মাসয়ালা :- যদি কারো কাছে কিছু সোনা ও কিছু রূপা থাকে যে গুলি পৃথক পৃথক নেসাব পরিমান না হয় তাহলে দুটিকে একত্রিত করে তার মূল্য যদি সাড়ে ৫২ ভরি রূপার মূল্যের পরিমান হয় তাহলে বৎসরান্তে জাকাত ফরজ হবে।
মাসয়ালা :- ব্যাঙ্কে যদি নেসাব পরিমান নগদ টাকা জমা থাকে তাহলে বছরান্তে শত করা আড়াই টাকা জাকাত দিতে হবে।
মাসয়ালা :- যদি কারো কাছে নেসাবের থেকে কম সোনা রূপা থাকে তাহলে তার জাকাত দিতে হবে না।
মাসয়ালা :- চাষের ধানের উপর জাকাত নেই। তবে যদি কেউ ব্যবসার জন্য ধান কিনে রাখে তাহলে জাকাত ওয়াজিব হবে।
মাসয়ালা :- ব্যবসার মালের মূল্য শুরুতে যদি নেসাব পরিমান হয় এবং এক বছর অতিক্রম হওয়ার পর তার মূল্য যদি নেসাব পরিমান থাকে তাহলে তার উপর জাকাত দিতে হবে।
মাসয়ালা :- বিভিন্ন প্রকারের ব্যবসার মাল থাকলে সমস্ত জিনিসের মোট মূল্য ধরতে হবে। যদি সাড়ে ৫২ তোলা রূপার মূল্যের সমান হয় তাহলে জাকাত ফরজ হবে।
মাসয়ালা :- কোন মাল যদি যৌথ মালিকানায় থাকে তাহলে প্রত্যেকের অংশ পৃথক করার পর যদি নেসাব পরিমান হয় তাহলে তার প্রতি জাকাত ফরজ হবে।
মাসয়ালা :- যে বস্তুর উপর জাকাত ওয়াজিব হয়েছে, জাকাত আদায়কারী চাইলে ঐ বস্তুও দিতে পারেন অথবা তার মূল্যও দিতে পারেন। যে দিন জাকাত দেওয়া হচ্ছে উক্তদিনের মূল্য হিসাবে দিতে হবে।
মাসয়ালা :- বছরের শুরুতে নেসাব পরিমান মাল বা টাকা ছিল। মাঝ বছরে কিছু বেড়ে গেল, যদি উক্ত টাকা বা মাল বছরের শেষ পর্যন্ত থাকে তাহলে সম্পূর্ণ মালের জাকাত দিতে হবে।
মাসয়ালা:- ছাগল, ভেড়া, গরু ইত্যাদি নেসাবের মালিক হওয়ার কারণে বৎসরান্তে তার জাকাত আদায় করে দিল অতঃপর অবশিষ্ট ছাগল ইত্যাদি বিক্রি করে দিল তাহলে ঐ মূল্যকে টাকার নেসাবের সহিত মিলিয়ে পুনরায় টাকার নেসাবের জাকাত দিতে হবে।
মাসয়ালা :- কারো কাছে কিছু ব্যবসার সামান আছে যার মূল্য নেসাব পরিমান নয়, হঠাৎ বাজারের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় উক্ত সামানের মূল্য নেসাব পরিমান হয়ে গেল তাহলে যেদিন থেকে মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে ঐ দিন থেকে বছরের শুরু মনে করতে হবে।
মাসয়ালা :- প্রত্যেক মালের লভ্যাংশকে আসল পুজির সাথে যুক্ত করতে হবে। বছরের শেষে যখন আসল মালের জাকাত দেওয়া হবে ঐ সাথে লভ্যাংশের ও জাকাত দিতে হবে। (মারাকিউল ফালাহ)
মাসয়ালা :- যদি শাসক বাদশা মুসলমান, ন্যায় পরায়ন হয় তাহলে তিনি সর্বপ্রকার মালের জাকাত আদায় করে গরীবদের মাঝে বন্টন করতে পারবেন।
মাসয়ালা :- বাদশা যদি অমুসলিম বা অত্যাচারী হয় এবং জোর পূর্বক জাকাত আদায় করে, তাহলে দেখতে হবে সে গুলো হক দারের উপর খরচ করছে কিনা। যদি করে তো ভালো তানাহলে পুনরায় জাকাত বার করে নিজে গরীবদের মাঝে বন্টন করে দেওয়া উচিৎ। (দুরে মুখতার)
মাসয়ালা :- যদি কেউ জাকাত না দেয় তাহলে বাদশা তাকে বন্দী করবেন এবং তাকে জাকাত দিতে বলবেন। জোর পূর্বক তার মাল থেকে জাকাতের জন্য মাল পৃথক করা হবে না। কারণ জাকাত সঠিক হওয়ার জন্য নিয়্যাত শর্ত। আর জোর পূর্বক নিলে নিশ্চয় তা পাওয়া যাবে না।
মাসয়ালা :- যদি কেউ হালাল এবং হারাম মাল মিশিয়ে দেয় এবং তা নেসাব পরিমান হয় তাহলে তাকে সম্পূর্ণ মালের জাকাত দিতে হবে।
মাসয়ালা :- যদি কেউ জাকাত ফাকি দেওয়ার জন্য বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মাল কাউকে দিয়ে দেয় তার কিছু দিন পর পুনরায় নিয়ে নেয় তাহলে উক্ত বছরের জাকাত হবেনা বরং আবার নুতন বছর শুরু হবে কিন্তু তার এমন করা মাকরূহ তাহরিমী হবে।
বাণিজ্য পন্যে জাকাত
মাসয়ালা :- ব্যবসার মাল পত্রের মূল্য কষে তার চল্লিশ ভাগের এক ভাগ জাকাত দিতে হবে।
মাসয়ালা :- ব্যবসার মাল পত্রের উপস্থিত বাজার মূল্য যা হবে ঐ অনুযায়ী হিসাব করতে হবে। কেনা দামের হিসাব অনুযায়ী হবে না।
মাসয়ালা :- যদি ব্যবসার মাল পত্র এমন হয় যে প্রত্যেকটা আলাদা আলাদা করে মেপে দাম ঠিক করে জাকাত দেওয়া সম্ভব নয় তাহলে প্রত্যেকটা মালের আনুমানিক ওজনের থেকে কিছু কিছু বেশী ধরে জাকাত দেবে। কারণ কম দিলে ঐ অংশের জাকাত তার উপর থেকেই যাবে।
মাসয়ালা :- যে টাকা দিয়ে বাণিজ্য দ্রব্য ক্রয় করা হয়েছে যদি তা নেসাব পরিমান হয় তার উপর জাকাত ফরজ হবে।
মাসয়ালা :- টাকা দিয়ে যদি ব্যবসার উদ্দেশ্যে কোন জমি কেনা হয় বা ঘর বাড়ী কেনা হয় এবং উক্ত জমি বা বাড়ী ভাড়ায় দেওয়া হয় এবং তার বাৎসরিক আয় যদি নেসাব পরিমান হয় তাহলে তার উপর জাকাত ফরজ হবে।
মাসয়ালা :- ব্যবসার উদ্দেশ্যে ধান কল বা গম কল কিনলে তাথেকে উপার্জিত লভ্যাংশের উপর জাকাত ফরজ হবে।
মাসয়ালা :- ব্যবসার উদ্দেশ্যে কোন কিতাব ছাপালে, উক্ত কিতাব ছাপাতে বা অন্যান্য যা খরচ হয়েছে ঐ হিসাব করে জাকাত দিতে হবে।
মাসয়ালা :- যদি কোন ব্যবসায়ীর মূল পুঁজির কিছু নগদ টাকা কাছে থাকে আর কিছু টাকার বাণিজ্য দ্রব্য ক্রয় করে এবং উক্ত দ্রব্যে কিছু অংশ খরিদদার কে বিক্রয় করা হয়েছে যার পয়সা ধীরে ধীরে আদায় হচ্ছে তাহলে উক্ত ব্যবসায়ীর উপর সম্পূর্ণ পুঁজীর জাকাত ওয়াজিব হবে। তবে যে দ্রব্যের মূল্য খরিদদারদের কাছে বাকী আছে তার জাকাত এখনই দেওয়া ফরজ নয় যখন আদায় হবে তখন দেওয়া ফরজ। যদি অগ্রিম দিয়ে দেয় তাও জায়েজ হবে।
মাসয়ালা :- যে সমস্ত বাণিজ্য দ্রব্যের মূল্য কম বেশী হতে থাকে, যদি এমন মালের কেউ মালিক হন এবং উপস্থিত উক্ত দ্রব্য বিক্রয়ের কোন সম্ভবনা নেই তাহলে যখন এক বছর পূর্ণ হবে ঐ সময় বাজারে যে মূল্য হবে সেই হিসাবে জাকাত দিতে হবে। যদি জাকাতে উক্ত মাল দেওয়া হয় তাও জায়েজ হবে।
মাসয়ালা :- ব্যবসার পয়সা হতে যদি কেউ নিজের প্রয়োজনীয় খরচ করতে থাকেন তাহলে বছর শেষে খরচ বাদে অবশিষ্ট মালের উপর জাকাত ফরজ হবে।
মাসয়ালা :- আসল মাল যদি নেসাব পরিমান হয়, ব্যবসায় প্রত্যেক দিন অল্প অল্প যে লাভ হয় তা আসল মালের সঙ্গে মিলিত হয়ে সম্পূর্ণ মালের জাকাত ওয়াজিব হবে। যেমন- একজন ব্যক্তি নেসাব পরিমান টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করল এবং সারা বছর কিছু কিছু লাভ হতে থাকল, তাহলে বছরান্তে সম্পূর্ণ মালের হিসাব করে জাকাত দিতে হবে।
মাসয়ালা :- কারো উপর বিবির দেন মোহর বাকী থাকলে এবং উক্ত দেন মোহর তখনই আদায় করার নিয়াত না থাকলে তার জন্য জাকাত রহিত হবে না শামী কিতাবে আছে-
وَالصَّحِيحُ أَنَّهُ غَيْرُ مَانِع (شامي كتاب الزكوة )
মাসয়ালা :- ব্যবসার দ্রব্যাদীর জাকাত দেওয়ার সময় বাজারের মূল্য দেখে জাকাত দিতে হবে। যদি কেনা দামে জাকাত দেওয়া হয় এবং উপস্থিত বাজারের মূল্য তা হতে বেশী হয় তাহলে বেশী অংশ তার উপর বাকী থেকে যাবে।
মাসয়ালা :- যদি কোন ব্যক্তি কাউকে ব্যবসার জন্য কিছু টাকা দেন। ব্যবসায় লাভ হলে লভ্যাংশ উভয়ে বণ্টন করে নেন। যদি পূর্বের টাকা নেসাব পরিমান হয়ে থাকে তাহলে টাকার মালিকের উপর আসল টাকা এবং লভ্যাংশ উভয়ের উপর জাকাত হবে। আর দ্বিতীয় ব্যক্তির লভ্যাংশ যদি নেসাব পরিমান হয় তাহলে বছর পূর্ণ হলে জাকাত ওয়াজিব হবে।
মাসয়ালা :- যদি কেউ ভাড়ায় দেওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর খরিদ করে তাহলে উক্ত ঘরের মূল্যের উপর জাকাত হবে না। বরং ভাড়ার টাকা যদি নেসাব পরিমান হয় এবং এক বছর জমা থাকে তাহলে জাকাত হবে।
ধার বাকী ব্যবসার জাকাত
মাসয়ালা :- যে সমস্ত টাকা ব্যবসায় খরীদদার দের কাছে ধার থাকে তার উপরে ও জাকাত ওয়াজিব হয়। তবে তার জাকাত আদায় করা তখনই ফরজ নয় বরং যখন আদায় হবে তখন জাকাত আদায় করা ফরজ হবে। যদি সম্পূর্ণ আদায় হয় তাহলে সম্পূর্ণ মালের বা টাকার জাকাত দেবেন আর যদি কিছু আদায় হয় তাহলে যতটুকু আদায় হবে তার জাকাত আদায় করবেন তবে কমপক্ষে ৪০ দিরহাম পরিমান হতে হবে। (দুরে মুখতার)
মাসয়ালা :- যদি ধার টাকা আদায় কয়েক বছর পরে হয় তাহলে যে বছর গুলো আদায় হয়নি ঐ বছর গুলোর ওজাকাত দিতে হবে।
মাসয়ালা :- ব্যবসায় ঋণ গ্রন্থ ব্যক্তি জাকাত দেওয়ার সময় ঋণ বাদ দিয়েজোকাতের হিসাব করবেন।
মাসয়ালা :- ধারে বিক্রি মালের জাকাত আদায় হওয়ার পরেই দিতে হয়। তবে বছর শেষ হলে নগদ বিক্রি ওসধার বিক্রি এক সঙ্গে হিসাব করে জাকাত দিয়ে দেওয়া ভালো যাতে সারা বছর বার বার এই ঝামেলা না থাকে।
মাসয়ালা :- যদি কেউ সারা বছর অল্প অল্প করে জাকাত দিতে থাকেন আর তার হিসাব রেখে দেন এবং বছরের শেষে যা কম হয় সেগুলো দিয়ে দেন তাহলে তার এমন করা জায়েজ আছে এবং এভাবে জাকাত আদায় হয়ে যাবে।
শেয়ার ব্যবসায় জাকাত
মাসয়ালা :- যদি কেউ কোন কোম্পানীর শেয়ার খরিদ করে এক দামে বছর পূর্ণ হওয়ার সময় তা যদি বেড়ে যায় বা কমে যায় তাহলে উপস্থিত সময়ের মূল্য হিসাবে জাকাত ফরজ হবে। যেমন শেয়ার কেনা ছিল ১০ টাকা করে, বছর পূর্ণ হলে তার দাম বেড়ে ১৫ টাকা হল তাহলে জাকাত ১৫ টাকা হিসাবে দিতে হবে। আর যদি কমে গিয়ে ৫ টাকা করে হয়ে যায় তাহলে ৫ টাকা হিসাবে জাকাত দিতে হবে।
মাসয়ালা :- শেয়ার ব্যবসায় আসল টাকার সহিত যত টাকা লাভ হয়েছে তারও হিসাব করে জাকাত দিতে হবে।
মাসয়ালা :- ব্যবসার বা ভাড়া বাড়ীর উপর যে সরকারী ট্যাক্স বসানো হয় তা জাকাত বলে গণ্য হবে না। অর্থাৎ সরকারী উক্ত ট্যাক্স আদায় করলেও জাকাত আলাদা দিতে হবে।
মাসয়ালা :- শেয়ার যদি ব্যবসার উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয়, অর্থাৎ স্বয়ং শেয়ার কেই কেনা বেচা উদ্দেশ্য হয় তাহলে শেয়ারের মোট দামের উপর জাকাত ওয়াজিব হবে। তা নাহলে কেবল শেয়ারের ঐ অংশের উপর জাকাত ফরজ হবে যা ব্যবসায় লাগানো হয়েছে।
মাসয়ালা:- যদি কোন কোম্পানীর কয়েক জন অংশীদার হন তাহলে একত্রিত ভাবে অর্থাৎ সবার অংশের মোট হিসাব করে জাকাত দেওয়াও জায়েজ, আর যদি পৃথক পৃথক যে যার অংশের হিসাব করে জাকাত দেন তাও জায়েজ হবে।