ভিক্ষা কে করবে?

ভিক্ষা কে করবে? কেবল মাত্র তিন প্রকার বেক্তির জন্য ভিক্ষা করা জায়েজ।

রসুলে পাক (সঃ) এঁর সাহাবা হজরত ক্ববীসা (রাঃ) বলেন, আমি একসময় একটা বস্তুর জমানত নিয়েছিলাম। সে কারণে আমার একটু আর্থিক অসুবিধা হয়েছিল আমি রসুলে পাকের (সঃ) কাছে গিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করি, রসুলে পাক (সঃ) আমাকে বললেন, একটু অপেক্ষা কর, কোন জায়গা থেকে সাদকা আসলে তোমাকে তা থেকে সাহায্য করব। 

আমি হুজুরের (সঃ) দরবারে অপেক্ষা করতে লাগলাম। ইতি মধ্যে হুজুর (সঃ) আমাকে বললেন, ক্বাবীসা শোন, কেবল মাত্র তিন ব্যক্তির জন্য ভিক্ষা করা জায়েজ।

 

১- ঐ ব্যক্তি যে কোন জামানত গ্রহণ করেছে, তার জন্য জামানত পরিমান ভিক্ষা করা জায়েজ।

 

২- যে হঠাৎ কোন বিপদে সর্বহারা হয়েছে। তার জন্য প্রয়োজন মিটানো পরিমান ভিক্ষা করা জায়েজ।

 

৩- ঐ ব্যক্তি যে খাদ্যের কোন সরঞ্জাম না থাকার জন্য উপবাসে কাটায়, তার জন্য জীবন ধারণের পরিমান ভিক্ষা করা জায়েজ। এই তিন জন ব্যতীত যে ভিক্ষা করে, সে হারাম মাল ভক্ষণ করে।

অন্য একটা রেওয়ায়েতে আছে, দুই ব্যক্তির জন্য ভিক্ষা করা নাজায়েজ বা হরাম। ১- ধনী। ২- উপার্জন সক্ষম ব্যক্তি আর যে ব্যক্তি কেবল মাত্র মাল বৃদ্ধির জন্য ভিক্ষা করে, কিয়ামতের ময়দানে তার মুখ মণ্ডলে একটা ক্ষত থাকবে এবং সে যেন আগুন ভক্ষণ করবে।

 

রসুলে পাক (সঃ) বলেন, কিয়ামতের দিনে অবৈধ ভিক্ষাকারীর মুখ মণ্ডলে কোন গোস্ত থাকবেনা। গোন্তহীন মুখমণ্ডল নিয়ে সে কিয়ামতের ময়দানে উঠবে।

‎‫عَنْ خَالِدِ بْنِ عَلِيُّ الْجُهَنِي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ مَنْ بَلَغَهٍ عَنْ أَخِيهِ‬‎ ‎‫مَعْرُوفٌ مِنْ غَيْرِ مَعْرُوفٌ مِنْ غَيْرِ مَعْرُوفٌ مِنْ غَيْرِ مَعْرُوفٌ فَلْيَقْبَلُهُ وَلَا يَرُدُّهُ فَإِنَّمَا‬‎ ‎‫هُوَ رِزْقٌ سَاقَةُ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ إِلَيْهِ (احمد)‬‎

 

অর্থ:- হজরত খালিদ বিন আলি আল জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুলে পাক (সঃ) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি লোভ বা চাওয়া ব্যতীত তার ভাইয়ের কাছ থেকে কোন কিছু পায়, তার সেটা কবুল করা উচিৎ। সে যেন সেটা ফিরিয়ে না দেয়। কারণ, এটা হল রিজিক যেটা আল্লাহ পাক তার প্রতি প্রেরণ করেছেন।

 

বিনা চাওয়া ও বিনালোভে কোন বস্তু কাছে আসলে সেটা সানন্দে গ্রহণ করা দরকার কারণ ফিরিয়ে দিলে আল্লাহর নেয়ামতের না শুকরী অকৃতজ্ঞতা করা হয়। আল্লাহ পাক বলেন, তোমরা যদি শোকর গোজার হও, আমি তোমাদের কে আরো বাড়িয়ে দেব। আর যদি অস্বীকার কর নিশ্চয় আমার শাস্তি খুব কঠোর এই জন্য বহু বুজর্গানে দ্বীন হাদিয়া কবুল করতেন এবং এখন ও করে থাকেন।

 

একজন খোরাসান বাসী হজরত যোনায়েদ বাগদাদী (রঃ) এর নিকট এসে একটা মোটা হাদিয়া পেশ করলেন হজরত যোনায়েদ বাগদাদী (রঃ) বললেন, আমি এটা গরীবদের মধ্যে ভাগ করে দেব। উত্তরে লোকটি বলল, হুজুর আমার ইচ্ছা যে, আপনি এটা আপন প্রয়োজনে ব্যয় করবেন। লোকটি আবার বলল, আপনি সিরকা তরকারীর পরিবর্তে এটা দিয়ে হালুয়া

ইত্যাদি খরিদ করে খাবেন। তার পর হজরত হাদিয়াটা কবুল করলেন। লোকটি বলল, সারা বাগদাদে আপনার এহসান আমার উপর সব থেকে বেশী, কারণ আপনি আমার হাদিয়া কবুল করেছেন। উত্তরে হজরত যোনায়েদ বাগদাদী (রঃ) বললেন, তোমার মত লোকের হাদিয়া কবুল করা উচিৎ।

 

এক সময় হজরত আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) হজরত আয়েশা (রাঃ) এর কাছে কিছু হাদিয়া প্রেরণ করলেন। আম্মাজান হজরত আয়েশা (রাঃ) সেগুলো ফেরৎ দিলেন এবং বললেন, আমার অভ্যাস কারো কাছ থেকে কিছু গ্রহন না করা। পরক্ষণেই তিনি আবার হজরত আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) এর দুত কে ডাকলেন এবং তার কাছ থেকে হাদিয়া কবুল করলেন।

 অতঃপর তিনি বললেন, এই মাত্র হুজুর পাক (সঃ) এর একটা বানী আমার স্মরণে আসলো হুজুর (সঃ) এরশাদ করেছেন হে আয়েশা! বিনা চাওয়ায় তোমার কাছে কোন জিনিস হাদিয়া আসলে তুমি সেটা কবুল করবে। কারণ, সেটা রিজিক আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরণ করা হয়েছে।

 

হজরত আবেদ বিন ওমর (রা) কে হুজুর পাক (সঃ) বলেন, এরকম দান দ্বারা তুমি আপন ব্যয় বাড়িয়ে নাও আর তোমার প্রয়োজন না থাকলে প্রয়োজন ওয়ালাকে দিয়ে দাও।

 

একদা হুজুর (সঃ) হজরত ইবনে ওমর (রাঃ) কে কিছু দান করতে চেয়েছিলেন, হজরত ইবনে ওমর (রাঃ) হুজুর (সঃ) কে বলেন, ইয়া রসুলাল্লাহ! আমার থেকে বেশী মুখাপেক্ষী লোক কে দিয়ে দেন। উত্তরে হুজুর (সঃ) বললেন বিনা চাওয়ায় যা কিছু তোমার কাছে আসে তা কবুল কর, পরে তুমি সেটা আপন কাজে ব্যবহার করতে পারো বা সেটা অন্যকে সাদকাও করে দিতে পারো। 

আর যে মাল তোমার কাছে এ রকম ভাবে আসবে না, তার প্রতি তুমি লক্ষ্য করবে না। কবুল করাতো অনেক পরের কথা।

 

হজরত সুফিয়ান সওরী (রঃ) কখনও কখনও হাদিয়া কবুল করতেন না এবং দাতার কাছে তা ফেরৎ দিতেন, অতঃপর তিনি বলতেন, আমি যদি মনে করি যে, দাতা হাদিয়ার ব্যাপারে কারো সাথে গর্ব করবে এবং তা সকলের সামনে প্রকাশ করবে, তবে আমি তা ফেরৎ দিয়ে থাকি।

 আর এরকম ধারণা না থাকলে উক্ত হাদিয়া কবুল করি। তিনি আরো বলতেন,

 

আমি দাতার প্রতি দয়া পরবশ হয়ে এ রকম করে থাকি কারণ সে লোকের সামনে এ রকম প্রকাশ করে সওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়। আর অন্যদিকে তার মাল ও নষ্ট হয়। সেকারণে আমি তার মাল নষ্ট হতে দেইনা। 

সুতরাং আলোচনা দ্বারা পরিস্কার ভাবে বোঝা গেল যে, বিনা চাওয়া বা নফসের খাহেশাত ছাড়া কোন বস্তু হাদিয়া স্বরূপ আসলে সেটা কবুল করাতে কোন দোষ নেই। সেটা কবুল করা জায়েজ রবং যে হাদিয়া দ্বারা পরস্পর মহব্বত ও সম্পর্ক বৃদ্ধি উদ্দেশ্য হয়, তা কবুল করা সুন্নাত।

কয়েকজন দান শীলের ঘটনা

কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহ পাক বান্দাদের কে কয়েকটা বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। যথা-

 

‎‫عَنْ ابْنِ مَسْعُودٍ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ لَا تَزُولُ قَدَمَا ابْنِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُسْأَلَ‬‎ ‎‫عَنْ خَمْسِمِ وَنَفَهُ عَنْهُ عَنْ خَمْسِيٍ عَنْفٍ عَنْهٍ عَنْ خَمْسِيٍ عَنْفٍ عَنْهٍ شَبَائِهِ فِيمَا‬‎ ‎‫أَبْلَاهُ وَعَنْ مَالِةٌ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَ فِيمَا أَنْفَقَهُ وَمَا ذَا عَمِلَ فِيمَا عَلِمُ ()‬‎

 

অর্থঃ- হজরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হুজুর পাক (সঃ) থেকে বর্ণনা করেন, কিয়ামতের দিন মানুষ কে পাঁচটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার আগে সে তার পা নাড়াতে পারবেনা। 

(ক) তার জীবন সম্পর্কে, কোন রাস্তায় সে ব্যয় করেছে। 

(খ) তার যৌবন কাল সম্পর্কে কোন কাজে সে যৌবন কাল ব্যয় করেছে। 

গ) তার ধন-সম্পত্তি সম্পর্কে কিভাবে সে উপার্জন করেছে। (ঘ) তার

 

ধন-সম্পত্তির ব্যয় সম্পর্কে কোন রাস্তায় সে তার ধন সম্পত্তি ব্যয় করেছে। (ঙ) তার ইলম সম্পর্কে ইলম অনুযায়ী সে কি আমল করেছে।

 

বান্দা কে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর যথাযথা দিতে হবে। তৃতীয় ও চতুর্থ প্রশ্ন করা হবে তার ধন সম্পত্তি সম্পর্কে তার ধন-সম্পত্তির আয়ের পন্থা ও ব্যয়ের পন্থার পরিপূর্ণ হিসাব আল্লাহ পাক নেবেন। 

হাদিস পাকের বর্ণনায় পাওয়া যায় ধন-সম্পত্তির আয়ের পন্থা অবৈধ হলে, আর সেটা ভক্ষণ করলে, ভক্ষণ কারীর কোন এবাদাত আল্লাহ পাকের দরবারে কবুল হয়না। তদ্রূপ ব্যয়ের রাস্তাও মসৃন না হলে আল্লাহ পাকের দরবারে পাকড়াও হতে হবে তাই সাহাবা ও বুজুর্গানে দ্বীন দের জীবনী লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে,

 

তাদের ধন-সম্পত্তির একটা বৃহতাংশ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা হয়েছে। নিম্নে এ রকম কয়েকজনের কিঞ্চিত ঘটনা বর্ণনা করা হল।

হজরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাসের (রাঃ) বদান্যতা

বান্দা কে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর যথাযথা দিতে হবে। তৃতীয় ও চতুর্থ প্রশ্ন করা হবে তার ধন সম্পত্তি সম্পর্কে তার ধন-সম্পত্তির আয়ের পন্থা ও ব্যয়ের পন্থার পরিপূর্ণ হিসাব আল্লাহ পাক নেবেন। 

হাদিস পাকের বর্ণনায় পাওয়া যায় ধন-সম্পত্তির আয়ের পন্থা অবৈধ হলে, আর সেটা ভক্ষণ করলে, ভক্ষণ কারীর কোন এবাদাত আল্লাহ পাকের দরবারে কবুল হয়না। তদ্রূপ ব্যয়ের রাস্তাও মসৃন না হলে আল্লাহ পাকের দরবারে পাকড়াও হতে হবে তাই সাহাবা ও বুজুর্গানে দ্বীন দের জীবনী লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে,

 

তাদের ধন-সম্পত্তির একটা বৃহতাংশ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা হয়েছে। নিম্নে এ রকম কয়েকজনের কিঞ্চিত ঘটনা বর্ণনা করা হল।

 

একদা বসরা প্রদেশের কয়েকজন ব্যক্তি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের কাছে আসলেন তারা হজরত কে বললেন, হুজুর। আমাদের ওখানে একজন খুব দ্বীনদার পরহেজগার লোক আছে। তার রোজা, নামাজ কোনটাই কাজা হয়না কিন্তু বেচারা নিতান্ত গরীব। তার একটা মেয়ে বিবাহ দেওয়া সত্ত্বেও অভাবের কারণে মেয়েকে স্বামীর হাতে তুলে দিতে পারছেনা।

 

এই কথা শুনে হজরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস আপন ঘরে গেলেন এবং সুন্দুক খুলে ছয়টা স্বর্ণমুদ্রা বার করে তাদের হাতে দিলেন। তারা যখন আশরাফিগুলো নিয়ে চলে যাওয়ার উপক্রম করল, তখন হজরত বললেন, দেখ! আমরা কিন্তু তার সাথে ভাল ব্যবহার করিনি, কারণ এই অর্থ নিয়ে সে কেনা কাটার ঝামেলায় পড়বে যার জন্য তার এবাদতে বিঘ্ন ঘটবে। আমরা যদি তার যাবতীয় সরঞ্জাম কিনে দেই তাহলে আমাদের সম্মানের কোন ক্ষতি হবেনা।

 

এই কথা শুনে সকলেই ঐক্যমত হয়ে সমস্ত সরঞ্জাম কিনে তার বাড়ীতে পৌঁছে দিলেন।

হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ)

হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর বদান্যতার ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে ভাস্বর হয়ে আছে। তবুকের যুদ্ধের জন্য হুজুর পাক (সঃ) উপস্থিত সাহাবা কেরামদের কে উৎসাহ প্রদান করে চাঁদার জন্য বললেন। 

তখন হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) ঘরের সমস্ত আসবাস পত্র রসুলে পাক (সঃ) এর পদতলে সমর্পন করলেন। হুজুর (সঃ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি বাড়ীর জন্য কি রেখে এসেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি ঘরে আল্লাহ এবং তাঁর রসুলকে রেখে এসেছি। কুরআন শরীফে স্বয়ং আল্লাহ পাক হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর প্রশংসা এই ভাবে করেছেন।

‎‫وَسَيُجَنَّبها الأتقى …… تجزى (سوره ليل)‬‎

অর্থাৎ জাহান্নামের আগুন থেকে ঐ ব্যক্তি কে দূরে সারিয়ে রাখা হবে, যে পবিত্র করবার জন্য আল্লাহর রাস্তায় আপন মাল খরচ করেছে। তার উদ্দেশ্য কেবল মাত্র আল্লাহ পাকের রেজামন্দি হাসিল করা। (৩০ পারা, সুরা লাইল, ১৭ আয়াত)

হজরত আব্দুল্লাহ বিন জুবাইর (রাঃ) বলেন হজরত আবু বকর (রাঃ) দুর্বল গোলাম গুলোকে খরিদ করে আজাদ করে দিতেন। হুজুর (সঃ) বলেন, হজরত আবু বকরের (রাঃ) মালের বদলা স্বয়ং আল্লাহ পাক দেবেন। তার মালে আমার যত উপকার হয়েছে, আর কারো মালে ঐ রকম উপকার হয়নি।

হজরত আব্দুল্লাহ বিন আমের (রাঃ)

হজরত আব্দুল্লাহ বিন আমের (রাঃ) এক রাত্রিতে আপন বাড়ীর দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তিনি লক্ষ্য করলেন, একজন যুবক তার অনুকরণ করে পিছনে পিছনে আসছে। তিনি যুবককে তার আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন যুবকটি বলল, 

পথিমধ্যে যদি আপনার কোন অসুবিধা হয়, এই আশঙ্কায় আমি আপনার অনুসরণ করে আসছি এবং ভাবছি, আপনার বাড়ী পর্যন্ত আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসি। হজরত আব্দুল্লাহ বিন আমের উক্ত যুবকের হাত ধরে বাড়ী পর্যন্ত নিয়ে গেলেন এবং তাকে এক হাজার আশরাফি দিলেন। অতঃপর তাকে বললেন, তোমার আপন কাজে এগুলো ব্যয় করবে।

হজরত ইমাম হাসান (রাঃ)

হজরত ইমাম হাসান (রাঃ) এর কাছে একজন অপরিচিত লোক উপস্থিত হয়ে তার চাহিদার কথা হজরতের কাছে বলল এবং হজরতের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করল। উত্তরে তিনি লোকটিকে বললেন, যতটা পরিমান সাহায্যের তোমার দরকার,

 ততটা পরিমান সাহায্য করার ক্ষমতা আমার নেই তবে আমি যতটা সাহায্য করতে সক্ষম, তার উপর তুমি সন্তুষ্ট থাকলে আমি তোমার সাহায্য করতে প্রস্তুত আছি লোকটি বলল, হে আওলাদে রসুল! আপনি যা দেবেন, আমি সন্তুষ্ট ভাবে তাই গ্রহন করব। 

তখন হজরত হাসান (রাঃ) তার কোষাধ্যক্ষ কে বললেন, তোমার কাছে যে তিন লক্ষ দিরহাম রাখা ছিল, তার মধ্যে যা অবশিষ্ট আছে, সেগুলো আমার সামনে হাজির কর। কোষাধ্যক্ষ পঞ্চাশ হাজার দেরহাম নিয়ে আসলে তিনি বললেন,

 

আরো পাঁচশত আশরাফি আছে তো কোষাধ্যক্ষ সেটাও উপস্থিত করল।

 

তখন তিনি সমস্ত কিছু লোকটিকে সমর্পন করলেন এবং নিজের

গায়ের চাদরটাও খুলে দিলেন। গোলামগণ বলল, হুজুর ঘরে খাওয়ার জন্য একটা দেরহাম ও বাকী নেই। উত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহ পাক আমাদের কে এর উত্তম প্রতিদান দেবেন।

হজরত আয়েশা (রাঃ)

হজরত আয়েশা (রাঃ) তাঁর পিতার মতো দানশীল ছিলেন। হেকায়েতে সাহাবা কিতাবের বর্ণনায় পাওয়া যায়, একবার তিনি এক সাথে এক লক্ষ সত্তর হাজার দেরহাম দান করে দিয়েছিলেন। অথচ তার বাড়ীতে ইফতার করার মতো কিছু ছিল না।

 

হজরত তামিম বিন উরওয়াহ (রাঃ) বলেন, আমি হজরত আয়েশা (রাঃ) কে একত্রে সত্তর হাজার দেরহাম লোকেদের মধ্যে বন্টন করতে দেখেছি। অথচ সে সময় তার কাপড়ে তালি লাগানো ছিল।

 

বর্ণিত আছে, এক সময় হজরত মোনকাদের (রাঃ) হজরত আয়েশার (রাঃ) এর কাছে তার ভীষণ প্রয়োজনের কথা বললেন। হজরত আয়েশা (রাঃ) বললেন, এখন আমার হাত একেবারে শূন্য। যদি আমার কাছে এখন দশ হাজার দেরহামও থাকত, তবুও আমি সম্পূর্ণটাই তোমাকে দিয়ে দিতাম। এই কথা শুনে হজরত মোনকাদের প্রস্থান করলেন।

 

কিছুক্ষণ পরে হজরত খালিদ বিন আসাদের পক্ষ থেকে হজরত আয়েশার কাছে দশ হাজার দিরহাম হাদিয়া এসে পৌঁছলে, তিনি বললেন, আল্লাহ পাক আমার পরীক্ষা নিলেন এই বলে তিনি হজরত মোনকাদের (রাঃ) কে ডেকে সম্পূর্ণ দশ হাজার দিরহাম তাকে দিলেন।

 

এই টাকা থেকে হজরত মোনকাদের (রাঃ) এক হাজার দেরহাম দিয়ে একটা বাদী কিনে ছিলেন। যার পেটে জন্ম হয়েছিলেন যথাক্রমে মুহাম্মদ, আবুবকর ও ওমর নামে তিনটি পুত্র সন্তান। পরবর্তিতে এই তিন জন মদিনার বিখ্যাত আবেদ রূপে গণ্য হন।

হজরত সায়িদ বিন খালেদ

আরব দেশে হজরত সায়িদ বিন খালেদ ছিলেন একজন ধনী ব্যক্তি কোন অভাব গ্রন্থ লোক তার কাছে আসলে তিনি কখনই কার্পন্য করতেন না, যদি প্রয়োজনের সময় মাল না থাকতো তবে একটা পরওয়ানা লিখে দিতেন এবং বলতেন যখন আমার নিকট মাল আসবে, তখন এটা দেখিয়ে মাল নিয়ে যাবে।



إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَ الْمُؤلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ

অর্থাৎ সাদকা (জাকাতের মাল) ফকীর মিসকিন, যারা জাকাত আদায় ও তার সংরক্ষণ ইত্যাদি কাজে লেগে থাকেন, যাদের অন্তরকে আকৃষ্ট করা উদ্দেশ্য, দাস মুক্তি, ঋণী ব্যক্তি, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের জন্য।

মাসয়ালা :- সমস্ত তাফসীরবিদগণের মতে উক্ত আয়াতে সাদকা বলতে ওয়াজিব বা ফরজ সাদকা অর্থাৎ জাকাত উদ্দেশ্য।

অতএব ওয়াজিব সাদকা বা জাকাত বর্ণিত ব্যক্তিদের কে দিতে হবে। তবে যদি নফল সাদকা হয় তাহলে এছাড়া অন্য জনকেও দেওয়া যেতে পারে।

মাসয়ালা :– ওয়াজিব বা ফরজ সাদকা ঐ গুলোকে বলা হয় যার ওয়াজিব অথবা ফরজ হওয়া শরীয়ত হতে বর্ণিত। যেমন জাকাত সাদকা ফিত্র (ফিত্রা) মান্নতের সাদকা। আর যে সাদকা মানুষ নিজ তরফ থেকে দান করেন তাকে নফল সাদকা বা দান বলা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top