নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাওয়ার কারন ,ও মাসয়ালা
Table of Contents
নামাজের শর্ত সমূহের মধ্যে কোন শর্ত না পাওয়া গেলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। যেমন:- অ-পবিত্রতা নামাজ ভঙ্গ হয়ে হওয়ার প্রধান কারণ গুলোর মধ্যে একটা।
জ্ঞান হারালে, ইচ্ছাকৃত অকারণে কিবলার দিক থেকে সিনা/বুক ফিরিয়ে নিলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায়। যদি অনিচ্ছাকৃত সিনা ঘুরে যায় এবং তা কোন রুক্স আদায় করার সময় পর্যন্ত না থাকে তাহলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায় না।
নামাজের কোন ফরজ ছেড়ে গেলে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত হোক নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
নামাজের কোন ওয়াজিব ইচ্ছাকৃত ছেড়ে দিলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
ভুল বশতঃ কোন ওয়াজিব ছেড়ে গেলে তার পর ইচ্ছাকৃত সাজদায়ে সাহু না করলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
নামাজের ভিতর কথা বললে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। যা দুই অক্ষর বা এক অক্ষর বিশিষ্ট হয় এবং তার মানে বোঝা যায়। কথা কয়েক প্রকারের হয়।
যথা- (ক) কাউকে সম্বোধন করা (খ) কোন জীবজন্তু কে সম্বোধন করা (গ) নিজে নিজে কথা বলা (ঘ) এমন দোওয়া করা যা আরবী নয় অথবা আরবী কিন্তু হাদিস কুরআনে নেই। (ঙ) নামাজ অবস্থায় অন্য কে লুকমা দেওয়া অর্থাৎ তার ভুল পড়ার প্রতি সাবধান করা।
বিনা কোন সঠিক উদ্দেশ্যে কাশলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। সঠিক উদ্দেশ্যে কাশা যেমন- গলা পরিস্কার করার জন্য বা ইমামের ভুলের প্রতি সাবধান করার জন্য বা এই জন্য কাশা যাতে সামনে যাওয়া ব্যক্তি বুঝতে পারে যে নামাজ পড়ছেন। এতে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায় না।
কাঁদা অথবা উফ বা উহ বললে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
কোন বস্তু খেলে অথবা পান করলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
আমালে কাছির কি?
অর্থাৎ এমন কাজ যেটা কে নামাজি নিজেই মনে করছেন আমার এই কাজ নামাজ ছাড়া বেশী হয়ে গেছে। যদি ও উলামাগণের বিভিন্ন মতামত আমলে কাছির সম্বদ্ধে পাওয়া যায় তথাপি খোদ নামাজির বিবেকের উপর ছেড়ে দেওয়া টাই ইমাম আবু হানিফা (রঃ) এর মত।
নামাজ অবস্থায় কোন বাচ্চা কোন স্ত্রী লোকের স্তন চুষে দুধ বার করে ফেললে আমলে কাশির বলে গণ্য হবে।
বিনা কারণে নামাজের ভিতর চলা ফেরা করলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
ইমামের ওজু ভেঙ্গে গেলে প্রতিনিধি না করে মসজিদের বাইরে চলে গেলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
এমন ব্যক্তি কে খলীফা করা যার মধ্যে ইমামতির যোগ্যতা নেই।
নামাজ মাকরূহ হওয়ার মাসায়েল
কাপড় অথবা দাড়ি নিয়ে খেলা করা মাকরূহ তাহরিমী।
নামাজের অবস্থায় বেনিয়ম কাপড় পরা। অর্থাৎ উক্ত কাপড় যে নিয়মে পরিধান করা হয় তেমন ভাবে না পরা। যেমন- জামা পরা হল কিন্তু হাত দুটি হাতার ভিতর না দিয়ে দুই দিকে ঝুলিয়ে দেওয়া হল। অথবা চাদর পরা হল কিন্তু কাধের উপর না দিয়ে বগলের তলা দিয়ে গায়ে জড়িয়ে নেওয়া হল। এমন করা মাকরূহ তাহরিমী।
রুকু অথবা সাজদায় যাওয়ার সময় সম্মুখের অথবা পিছনের কাপড় গুটিয়ে নেওয়া মাকরূহ তাহরিমী।
নামাজ অবস্থায় নিরর্থক কোন এমন কাজ করা যা আমলে কাছিরের পর্যায়ের নয়। যেমন দাড়ির চুল গুলি হাত দিয়ে ধরা। বিনা কারণে কাপড় ধরা বিনা কারণে গা চুলকানো মাকরূহ।
জামার হাতা কনুইয়ের উপর পর্যন্ত গুটিয়ে নামাজ পড়া মাকরূহ তাহরিমী।
এমন কাপড় পরে নামাজ পড়া মাকরূহ যা পরে সাধারণতঃ লোক সমাজে যাওয়া যায় না।
নামাজে সাজদার স্থান হতে কাঁকর ইত্যাদি সরানো। কিন্তু যদি না সরিয়ে নিয়মনুযায়ী সাজদা সম্ভব না হয় তা হলে সরানো ওয়াজিব হবে। আর যদি সাজদা সম্ভব হয় কিন্তু সুন্নাত অনুযায়ী সাজদা না করা যায় তাহলে একবার সরানো জায়েজ হবে।
নামাজের ভিতর আঙুল মটকানো মাকরূহ তাহরিমী।
খালি মাথায় নামাজ পড়া মাকরূহ। কিন্তু যদি অতি আনুগত্য ও অতি বিনয়ী ভাব প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে হয় তা জায়েজ হবে।
নামাজ পড়তে পড়তে যদি মাথায় থেকে টুপি পড়ে যায় তাহলে ঐ অবস্থাতেই পরে নেওয়া ভালো কিন্তু যদি আমলে কাছির হওয়ার ভয় হয় তাহলে ঐ টুপি নামাজ অবস্থা পরার দরকার নেই।
দুহাতের আঙুল গুলি কে পাঞ্জা করা মাকরূহ তাহরিমী।
নামাজের মধ্যে কোঁকে হাত রাখা মাকরূহ তাহরিমী।
পেশাব, পায়খানা অথবা বায়ুর বেগ সত্ত্বেও নামাজ পড়া মাকরূহ তাহরিমী। ফরজ অথবা সুন্নাত বা নফল নামাজ অবস্থায় যদি কারো উক্ত জিনিস গুলির বেগ পায় এবং জামায়াত ছেড়ে যাওয়ার আশঙ্খা হয়, তাহলেও নামাজ ছেড়ে প্রয়োজন মিটিয়ে পুনরায় নামাজ পড়া উচিত। কিন্তু যদি ওয়াক্ত সংকীর্ণ হয় বা জানাজার নামাজ হয় তাহলে ঐ অবস্থাতে পড়ে নিতে হবে।
পুরুষদের জন্য চুলের বেনী বেঁধে নামাজ পড়া মাকরূহ।
সম্পূর্ণ চেহারা অথবা কিছু চেহারা কিবলার দিক থেকে সরিয়ে অন্য দিকে তাকানো মাকরূহ তাঞ্জিহী।
আত্তাহিইয়াতু পড়ার সময় কুকুরের মত বসা মাকরূহ তাহরিমী।
পুরুষদের জন্য সাজদায় গিয়ে হাতের কনুই মাটিতে বিছিয়ে দেওয়া মাকরূহ তাহরিমী।
নামাজির দিকে কেউ তাকিয়ে থাকলে তার দিকে ফিরে নামাজ পড়া মাকরূহ তাহরিমী।
ইমামের আগে রুকু সাজদাতে যাওয়া এবং তাঁর আগে মাথা উঠানো মাকরূহ তাহরিমী।
কেয়াম হালাত ছাড়া অন্য হালতে কুরআন পড়া মাকরূহ তাহরিমী।
প্রান বিশিষ্ট ছবি ওয়ালা কাপড়ে নামাজ পড়া মাকরূহ। নামাজীর উপরে, ডান দিকে বা বামদিকে কোন জন্তুর ছবি থাকলে নামাজ মাকরূহ তাহরিমী হবে। পিছন দিকে থাকলে মাকরূহ হওয়া সম্বন্ধে মতভেদ আছে। তবে যদি ছবি ঢাকা থাকে অথবা ছবি গুলি খুব ছোট ছোট হয় যা সহজে বোঝা যায় না বা ছবির মাথা কাটা থাকে বা মাথার ছবি মুছে দেওয়া থাকে তাহলে মাকরূহ হবে না।
জামা থাকা সত্ত্বেও কেবল পায়জামা পরে খালি গায়ে নামাজ পড়া মাকরূহ তাহরিমী।
নামাজের মধ্যে নাক মুখ ঢেকে রাখা মকরূহ তাহরিমী।
নামাজের মধ্যে কুরআন শরীফের তরতীবের বিপরিত কেরাত করা মাকরূহ তাহরিমী। অর্থাৎ কুরআন শরীফে যে সুরা পরে আছে তা প্রথম রাকাতে পড়া আর যা আগে আছে দ্বিতীয় রাকাতে পড়া। (নামাজ শিক্ষা পৃঃ ১১০ আঃ রুঃ আঃ)
ইমাম রুকুতে গিয়ে কোন মুসল্লী আসছেন বুঝতে পেরে দেরী করা মাকরূহ। যদি উক্ত মুসল্লী পরিচিত হন বা তার সম্মান উদ্দেশ্য হয় তাহলে মাকরূহ তাহরিমী হবে। তবে যদি সহয়তার উদ্দেশ্যে দু-এক তসবীহ পরিমাণ দেরী করা হয় মাকরূহ হবে না।
জোর পূর্বক কেড়ে নেওয়া জমিনে নামাজ পড়া মাকরূহ তাহরিমী।
অমুসলিম দের মন্দির কিংবা গীর্জা ঘরে নামাজ পড়া মাকরহ তাহরিমী।
নামাজ ভঙ্গ করার কিছু মাসায়েল
এমন রেলগাড়ী যাতে নিজের আসবাব পত্র বা ছেলেপুলে আরোহণ করেছে, নামাজ পড়তে পড়তে উক্ত গাড়ী ছেড়ে দিলে নামাজ ভঙ্গ করে গাড়ী ধরা জায়েজ এবং পরে ঐ নামাজ পড়ে দিতে হবে। (ফাঃ সিঃ) ফতওয়ায়ে , সিদ্দিকিয়া।
নামাজের মধ্যে পেশাব পায়খানার বেগ বেশী হলে নামাজ ভঙ্গ করা যায়। (ফাঃ সিঃ)
নামাজ পড়তে পড়তে কোন অন্ধ ব্যক্তিকে বিপদগামী হতে দেখলে নামাজ ভঙ্গ করে তাকে বাঁচানো জরুরী। (ফাঃ সিঃ)
মাতা-পিতা, দাদা-দাদী বা নানা-নানী কোন বিপদে পড়লে তাদের জন্য নামাজ ভঙ্গ করা ওয়াজিব। (ফাঃ সিঃ)
সাপ দেখে তার ক্ষতির আশঙ্কায় নামাজ ভঙ্গ করা জায়েজ (ফাঃ সিঃ)
হাস মুরগী রাতে খোলা থাকলে এবং শিয়ালে, বিড়ালে মুরগী খাওয়ার ভয় হলে নামাজ ভঙ্গ করা দুরস্ত। (ফাঃ সিঃ)
নামাজ পড়া অবস্থায় জুতো চুরি হওয়ার ভয় হলে নামাজ ভঙ্গ করা যাবে।
যদি কেউ নফল নামাজ পড়েন এমত অবস্থায় তাঁর মাতা- পিতা, দাদা-দাদী, নানা-নানী ডাকেন এবং তাঁরা জানেন না যে, অমুক নামাজে আছেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তির জন্য নামাজ ভঙ্গ করে জওয়াব দেওয়া ওয়াজিব। যদি তাঁরা নামাজের কথা জেনে ও ডাকেন তাহলে নামাজ ভঙ্গ করতে হয় না। তাদের ডাকে কোন দরকারে হোক বা বিনা দরকারে হোক।
মোক্তাদি নিজ ইমাম কে লোকমা দিলে নামাজ ফসিদ হয় না।
বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া লোকমা দেওয়া উচিৎ নয় বরং মাকরূহ। বিশেষ প্রয়োজন বলতে এমন বোঝায় যে, ইমাম ভুল পড়ে আগে চলে যাচ্ছেন অথবা কেরাত ভুলে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন, এমন অবস্থাকে বিশেষ প্রয়োজন বলা হয়। তবে ইমাম সাহেবের জন্য জরুরী কেরাত পরিমাণ পড়া হয়ে গেলে মোক্তাদীগণ কে লোকমা দিতে বাধ্য না করা উচিৎ। যদি বিনা প্রয়োজনে লুকমা দেওয়া হয় নামাজ ফাসিদ হবে না।।
মুক্তাদী যদি কুরআন শরীফ দেখে ইমাম সাহেব কে লোকমা দেয় তাহলে তার নামাজ ফাসিদ হয়ে যাবে।
নামাজ অবস্থায় কুরআন শরীফ দেখে এক আয়াত পড়লেও নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে। যদি উক্ত আয়াত আগে থেকে ইয়াদ থাকে এক আয়াতের কম পড়ে তাহলে নামাজ ফাসেদ হবে না।
স্ত্রী-পুরুষ পাশাপাশি একে অপরের অঙ্গ বারাবর দাঁড়ালে নামাজ ফাসেদ হয় যাবে।
সাজদার সময় যদি স্ত্রীলোকের মাথা পুরুষের পায়ের বরাবর হয় নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে।
নামাজের তাকবীর সমূহে আল্লাহু আকবার বলার সময় আল্লাহর “আলিফ” অথবা আকবারের “আলিফ” বা আকবারের “বা” কে টেনে পড়লে নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে।
কোন চিঠি বা লিখিত কাগজের উপর নজর পড়ার পর তার মর্ম বুঝতে পারলে, তাতে নামাজ নষ্ট হবে না। তবে যদি মুখে উচ্চারণ করেন নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে।
প্রয়োজনে সামান্য আগে পিছে হওয়া যায় কিন্তু সাজদার জায়গা ছাড়া আগে চলে গেলে নামাজ হবে না। (ফাঃ সিঃ)
বিনা প্রয়োজনে খুক খুক করে কাশলে বা গলা সাফ করার জন্য এক আধ শব্দ পরিমান আওয়াজ হলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু অসুবিধা অবস্থায় কাশলে নামাজ নষ্ট হবে না।
নামাজে হাঁচি হলে কেউ যদি আল হামদুলিল্লাহ বলেন, তাহলে নামাজ নষ্ট হবে না। কিন্তু অপরের হাঁচির জওয়াবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বললে নামাজ ফাসিদ হবে।
পোস্টটি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে অন্যকে পড়ার সুযোগ দিনঃ